পরীক্ষা নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক অজিতকুমার ভুঁইয়া। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়ুয়া ৪০ জন। তবে শিক্ষক ছিলেন এক জনই। আদালতের নির্দেশে চাকরিহারা তিনিও। এই সঙ্কটে স্কুলের পাশে দাঁড়ালেন অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক।
ছবিটা ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের বহড়াদাঁড়ি জুনিয়র হাই স্কুলের। চাকরি হারানোর খবর পেলেও গত শনিবার পর্যন্ত স্কুলে এসেছিলেন একমাত্র শিক্ষক কিসুন বেসরা। তবে সোমবার কিসুন গিয়েছিলেন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায়। এ দিকে, স্কুলে এখন পার্বিক মূল্যায়ন চলছে। অবস্থা জেনে পাশে দাঁড়ান অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক অজিতকুমার ভুঁইয়া। তিনিই এ দিন পরীক্ষা নিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবারও নেবেন। তবে পরীক্ষা মিটে গেলে আর স্কুলে আসবেন না বলে জানিয়েছেন।
এক সময় স্কুলে শিক্ষক ছিলেন দু’জন। ইতিহাসের শিক্ষক কিসুন বেসরা ও ইংরেজির শিক্ষক শান্তনু পাল। কয়েক বছর আগে শান্তনুকে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের ভোল জুনিয়র হাই স্কুলে পাঠিয়ে দেন (লোকাল অ্যারেঞ্জমেন্ট)। ফলে, স্কুলে একাই শিক্ষক হিসেবে ছিলেন কিসুন। তিনিই বিভিন্ন মহলে দরবার করে দু’জন অতিথি শিক্ষককে স্কুলে নিয়োগ করিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন গত বছর এবং চলতি বছরে ৩১ মার্চ অবসর নেন অজিতকুমার ভুঁইয়া।
এ দিন কিসুন কলকাতায় যাওয়ায়, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অনুরোধে স্কুলে এসেছিলেন অজিত। একাই পরীক্ষা নেওয়া থেকে মিডডে মিল খাওয়ানো— সামলেছেন। অজিত বলেন, ‘‘মানবিকতার খাতিরে স্কুলে আসছি। তবে মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষে আর আসব না। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের হাতে দায়িত্ব সমর্পণ করে দেব।’’ স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া নমিতা সিং, সপ্তম শ্রেণির দেবী প্রামাণিক, ষষ্ঠ শ্রেণির রাজদীপ বেরা, পঞ্চম শ্রেণির অলক হাঁসদারা। কে পড়াবেন তাঁদের? কিসুন বলছেন, ‘‘সমস্যার কথা বার বার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) জানিয়েছি। লাভ হয়নি।’’ রোহিণী চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রঞ্জিত সরেনের বক্তব্য, ‘‘অজিতবাবুকে দু’দিন পরীক্ষা নিতে বলেছি। তার পরে কী হবে জেলা শিক্ষা দফতর জানে।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষক পাওয়া খুব মুশকিল। কী যে করা যায়!’’