ভোট প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী আসন্ন প্রসবা সুষমা মাহাতো। সঙ্গে দলীয় পতাকা হাতে শাশুড়ি মঞ্জু মাহাতো। রাধানগর অঞ্চলের কুলডিহা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিকূলে থাকা জাতিসত্তা ভাবাবেগ অনুকুলে এনে জয় পেতে কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন আসন্ন প্রসবা। মায়ের আশা, তিনি সফল হলে সে জয় হবে নবজাতকেরও।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর আসনে লড়াইয়ের ময়দানে প্রার্থী মাত্র দু’জন। তৃণমূলের প্রার্থী সুষমা মাহাতো। তিনি আসন্ন প্রসবা। আর কয়েকদিন পরই সন্তান প্রসবের ধার্যদিন তাঁর। ওই আসনে সুষমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী শ্যামাপ্রসাদ মাহাতো। মাটিহানা ও কুলডিহা গ্রাম নিয়ে ওই পঞ্চায়েত আসন। গত পঞ্চায়েত ভোটে রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতটি দখল করেছিল তৃণমূল। তবে পঞ্চায়েতের ওই এলাকায় গতবার বিজেপি জিতেছিল। এ বার বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। সূত্রের খবর, কুড়মি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কুড়মি গ্রামগুলিতে প্রচার করতে পারছে না শাসকদল। মাটিহানা-কুলডিহার পঞ্চায়েত আসনটিতে প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে শেষ বেলায় আসন্ন প্রসবা সুষমাকেই প্রার্থী করে তৃণমূল।
সুষমার স্বামী ভবেশ মাহাতো বাম আমলে ছাত্র সমাজের আন্দোলন করেছিলেন। এখন তিনি সাঁকরাইল থানার স্পেশাল হোমগার্ড। সুষমার লড়াইটা বেশ কঠিন সেটা মানছেন রাধানগর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বিদ্যুৎ ঘোষ। বিদ্যুতের কথায়, ‘‘ওই আসনে আগে সিপিএম জিতত। গতবার বিজেপি জিতেছিল। এখন দু’টি গ্রামের কুড়মি সম্প্রদায় এককাট্টা হয়ে আমাদের প্রচারই করতে দিচ্ছে না। তৃণমূলের দলীয় পতাকাও খুলে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিদ্যুৎ মানছেন, কাউকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সুষমাকেই ওই আসনে দলের টিকিট দেওয়া হয়েছে। কুলডিহা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল শারীরিক সমস্যা সত্ত্বেও আশেপাশের বাড়িগুলিতে গিয়ে করজোড়ে ভোট চাইছেন সুষমা। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বৌমার সঙ্গে রয়েছেন শাশুড়ি মঞ্জু মাহাতোও।
রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই আসনের ভোটার সংখ্যা ৫৭৪ জন। তার মধ্যে ৫৭০ জনই কুড়মি সম্প্রদায়ের। মাটিহানার বাসিন্দারা জানালেন, গ্রামবাসীর সম্মিলিত আলোচনার ভিত্তিতে পেশায় গৃহশিক্ষক শ্যামাপ্রসাদ মাহাতোকে নির্দল প্রার্থী করা হয়েছে। কুড়মি সমাজের ডাকে শ্যামাপ্রসাদকে জেতাতে এককাট্টা হয়েছেন গ্রামবাসী। সুষমা জানালেন, তাঁর পক্ষে সব জায়গায় প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে না। শাশুড়ি ও দেওর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করছেন। দলের সভা-মিছিল করারও ঝুঁকি নিচ্ছেন না তৃণমূল প্রার্থী। সুষমার শাশুড়ি মঞ্জু বলেন, ‘‘এই অবস্থায় বৌমা প্রার্থী হয়েছে। তাই নিজেই পরিচিতজনদের বাড়ি গিয়ে অথবা ফোন করে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছি।’’ তবে এলাকায় গিয়ে জানা গেল, মাটিহানা গ্রামে প্রচারই করতে পারেনি তৃণমূল। কিন্তু কুড়মি সমাজের নির্দল প্রার্থী জোর প্রচার করছেন। এলাকায় উড়ছে জয় গরাম লেখা হলুদ পাতাকাও।
চিকিৎসকের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ১৪ জুলাই সুষমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন। আর আগেই অবশ্য পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশিত হবে। শ্যামাপ্রসাদ বলছেন, ‘‘কুড়মিদের জাতিসত্তার আবেগকে মান্যতা দেয়নি রাজ্য সরকার। তার ফলেই কুড়মিরা সংগঠিত হয়েছেন। তৃণমূলকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। হতে পারে ওঁদেরই কেউ পতাকা খুলে দিয়ে আমাদেরবদনাম করছেন।’’