শীতবস্ত্র দিয়ে দুঃস্থদের সাহায্য। নিজস্ব চিত্র
কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মঞ্চ বেঁধে দুঃস্থদের শীতবস্ত্র দান অথবা রাজনৈতিক দলের কম্বল বিতরণ— এ সব চেনা ছবি। সেই ছকবাঁধা ছবিই বদলে দিলেন খড়্গপুরের একদল যুবক-যুবতী। ওঁদের কেউ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ স্কুল শিক্ষিকা। নাগরিক সচেতনতার তাগিদেই শহর চষে প্রকৃত দুঃস্থ খুঁজে সাহায্য করলেন ওঁরা। শীতের রাতেই শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা অসহায় মানুষগুলির গায়ে চাপিয়ে দিলেন কম্বল, শিশুদের পরিয়ে দিলেন সোয়েটার-মোজা।
শনিবার রাতের এই কর্মসূচির ভাবনাটা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। এর মূল উদ্যোক্তা খড়্গপুরের তালবাগিচার বাসিন্দা পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বরুণ পাল। বেঙ্গালুরুতে কর্মরত থাকাকালীন বরুণ ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়া ঠিক করেন পথশিশুদের সাহায্য করবেন। তারপর ২০১৫ সালের শিশুদিবসে পথশিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ২০১৬ সালের জুনে এই দম্পতিই ‘বর্ন টু হেল্প’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন। উদ্দেশ্য, দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সাহায্য ও স্বজনহারা বৃদ্ধদের পাশে দাঁড়ানো। ক্রমে এই উদ্যোগে অনেকে এগিয়ে আসেন। নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করে চলতে থাকে সাহায্য। পরে দিল্লিতে এড্স আক্রান্ত শিশুদের সাহায্যেও একটি দল গড়া হয়। ২০১৬-এর জুলাইয়ে কলকাতার কাশীপুর ও হাওড়া বস্তিতে সাহায্য করতে তৈরি হয় আরও একটি দল। সর্বশেষ খড়্গপুরে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ৫ জনকে নিয়ে একটি দল গড়া হয়। এখন সদস্য বেড়ে হয়েছে ৪০জন। রয়েছেন রেলকর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষিকা, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। তাঁরা সিলভার জুবিলি হাইস্কুল সংলগ্ন রেলবস্তি ও তালবাগিচা আদিবাসী পাড়ায় শিশুদের লেখাপড়া শেখানো ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় কাজ করছেন। বরুণ বলছিলেন, “বাঁকুড়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় থেকেই কাজটা করতে চেয়েছিলাম। চাকরিতে পাওয়ার পরে ইচ্ছে পূরণ করি। সব থেকে বড় কথা এই দলে রাজনীতি ঘেঁষতে দিইনি।”
শনিবার রাতে খড়্গপুর স্টেশন, গিরিময়দান স্টেশন, গোলবাজার, গেটবাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দুঃস্থদের ৪০টি কম্বল, ৩০জন পথশিশুকে গরম পোশাক ও ৫০টি মোজা বিলি করেন ওঁরা। কর্মসূচিতে সামিল ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের শিক্ষিকা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওদের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে দারুণ লাগল।” কয়েক মাস আগে দলে যোগ দেওয়া ব্যবসায়ী এন আনন্দের কথায়, “সত্যি বলতে অনেক জায়গায় বস্ত্র বিতরণ, কম্বল বিতরণ হয়। কিন্তু সর্বত্র রাজনীতি জুড়ে থাকে। তাছাড়া প্রকৃত দুঃস্থ কম্বল পাচ্ছে কি না তা নিয়েও সংশয় থাকে। কিন্তু এখানে আমরা নিজেরা শহরে ঘুরে প্রকৃত শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোকে সাহায্য করেছি। খুব ভাল লাগছে।”