Abhishek Banerjee

অভিমানী নেতার চোখে প্রাক আষাঢ়

মঙ্গলবার সবংয়ের তেমাথানী পল্লিশ্রী রাইস মিলের ময়দানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন। রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠক হয়েছে দুটি ধাপে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ০৮:১৯
Share:

ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার পর্যালোচনা বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নব জোয়ার কর্মসূচিতে বেরিয়ে বারবার দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা। শুনছেন নেতা-বিধায়কদের কথা। এ বার দলের সাংগঠনিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে কার্যত কান্নায় ভেঙে পড়লেন ২২ বছরের পুরনো এক ব্লক সভাপতি। আর যাঁর প্রতি এই অভিমান তিনি আর কেউ নন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আস্থাভাজন' তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি!

Advertisement

মঙ্গলবার সবংয়ের তেমাথানী পল্লিশ্রী রাইস মিলের ময়দানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন। রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠক হয়েছে দুটি ধাপে। প্রথমে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। দ্বিতীয় ধাপে অভিষেকের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি, চেয়ারম্যান, প্রতিটি ব্লকের সভাপতি ও বিধায়কেরা। সেখানে বিভিন্ন ব্লকের সভাপতি ও বিধায়কের মুখে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অভিযোগ শুনতে হয় অভিষেককে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই সময়েই দলের বিধায়কের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের খড়্গপুর-২ ব্লকের সভাপতি তৃষিত মাইতি। ২২ বছরের পুরনো ব্লক তৃণমূল সভাপতি তৃষিত সেই কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। তবে যাঁর বিরুদ্ধে জমে থাকা এই অভিমানে তৃষিতের চোখে জল এসেছে তিনি খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি। তিনি পিংলার বিধায়ক। এই পিংলার বিধানসভার অধীনে খড়্গপুর-২ ব্লক। এমনকি অজিতের বাড়িও এই খড়্গপুর-২ ব্লকের মাদপুরে। স্বাভাবিকভাবে এমন নাটকীয় দৃশ্য দেখে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান তৃণমুলের অন্য ব্লকের সভাপতি ও বিধায়করা। অবশ্য এ দিন কার্যত তৃষিতের বক্তব্যে গুরুত্ব দিয়েছেন অভিষেক। এমনকি তৃষিতকে সঙ্গে নিয়ে অজিতকে কাজ করার কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি তৃষিত। বলেন, " যা বলার বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছি। অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরে বলব না।"

অবশ্য এ দিন শুধু খড়্গপুর-২ ব্লক নয়, ডেবরা, দাসপুর, কেশপুরের মতো একাধিক ব্লকের নেতা-বিধায়কদের এমনই নানা অভিযোগ শুনেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সোমবার অভি-যাত্রায় ডেবরা ব্লকের লোক জমায়েত কম হওয়া প্রসঙ্গও এ দিন বৈঠকে উঠে আসে। ওই দিন ডেবরা কলেজের কাছে অভিষেকের সঙ্গে আলাদা করে দেখা করেন সেলিমা খাতুন। এই ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিধায়ক হুমায়ুনের সমন্বয় রয়েছে। তবে সেলিমার সঙ্গে হুমায়ুনের সম্পর্কের অবনতির জেরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে তৃণমূলে। তার উপরে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অলোক আচার্য প্রসঙ্গে একাধিক অভিযোগ এ দিন অভিষেকের সামনে তুলে ধরেন ব্লক নেতৃত্ব। তবে সেলিমার সঙ্গে কোন্দল মিটিয়ে হুমায়ুনকে একসঙ্গে কাজের বার্তা দেন অভিষেক। যদিও অলোক আচার্যের বিষয়ে দল সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ করবেন বলেও জানিয়ে দেন। কেশপুরের প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জয় পান ও উত্তম ত্রিপাঠিকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথা বলেন বিধায়ক শিউলি সাহাকে।

Advertisement

এর আগে প্রথম ধাপে মানস ভুঁইয়া ও অজিত মাইতিকে নিয়ে হওয়া বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এই কেশপুর, ডেবরা, খড়্গপুর-২, দাসপুর, গড়বেতা-৩ ব্লকের সমস্যার সমাধানে মানস ও অজিতকে দায়িত্ব দেন অভিষেক। সঙ্গে কেশিয়াড়ির সমস্যার সমাধান অবিলম্বে করতে বলেন তিনি। তার পরেই আগামী বৃহস্পতিবার কেশিয়াড়ির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মেদিনীপুরে বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক করেন মানস। যদিও এ দিন অভিষেকের এই বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি মানস ভুইয়া। তিনি শুধু বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সবংয়ে আসায় সবংবাসী আপ্লুত। নব জোয়ার পরিণত হল জন জোয়ারে। সাংগঠনিক বৈঠকে তিনি দলের গরিমাকে বাঁচাতে এক হয়ে সকলকে কাজ করার বার্তা দিয়ে গেলেন।" আর তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, "সাংগঠনিক বৈঠক খুব ভাল হয়েছে। সবাই খোলামেলা আলোচনা করেছেন। কয়েকটি ব্লকে দলের যে সমস্যা রয়েছে তা মেটাতে অভিষেক আমাকে ও মানসদাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা দ্রুত মেটাব বলে কথা দিয়েছি। উনি ব্লক সভাপতি ও বিধায়কের সমন্বয়ে খুব গুরুত্ব দিতে বলেছেন। কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement