ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
মাওবাদীদের নাম করে টাকা তুলছে একটি ‘দুষ্ট চক্র’। তদন্তে নেমে সাতজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতরা হল কার্তিক শবর, শ্যামাপদ মাহাতো, কমল সর্দার, শশাঙ্ক সর্দার, দামোদর মহান্তি, বারিদ পাল। এর মধ্যে দামোদর ও বারিদের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার বারিকুল থানা এলাকায়। বাকিরা বেলপাহাড়ি থানা এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে ধৃতদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৬ ফেব্রুয়ারি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে ও বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে বাঁশপাহাড়ির এক হোম স্টে মালিকের কাছে দশ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে এবং পুলিশকে জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ফের ওই পর্যটন ব্যবসায়ীকে ফোন করে দুপুর ১২টার মধ্যে নেগুড়িয়া খালের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা পৌঁছে দিতে বলা হয়। অত টাকা কাছে না থাকায় ওই হোম স্টে মালিক ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সেখানে হাজির হন। চারজন অচেনা ব্যক্তি গাড়িতে করে এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। বাকি টাকা অনলাইনে দেওয়ার জন্য তারা একটি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বরও দেয়। অনুপম সরকারের নামে থাকা ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে কিছু টাকা পাঠান ওই ব্যবসায়ী। এরপরই ক্রমাগত হুমকি ফোনে অতিষ্ঠ ও আতঙ্কিত হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি হোম স্টে মালিক বেলপাহাড়ি থানায়অভিযোগ করেন।
পুলিশ তদন্তে নেমে মোবাইল ফোন নম্বর ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে ওই দিন রাতেই দেবীপ্রসাদ সরকার ও অনুপম সরকার নামে দুই অভিযুক্তকে পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। সেখানেই তাদের বাড়ি। সম্পর্কে তারা বাবা-ছেলে। ধৃতদের আদালতের নির্দেশে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে মূল চক্রী অরূপ পালের নাম পায় পুলিশ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শিলদা থেকে অরূপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত বছর পঁয়তাল্লিশের অরূপের বাড়ি হুগলি জেলার আরামবাগে। পুলিশ সূত্রের খবর, অরূপের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়ে প্রতারণারও অভিযোগ রয়েছে। ভুয়ো স্বেচ্ছাসেবী মাধ্যমে শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করারও অভিযোগ রয়েছে অরূপের বিরুদ্ধে। পরে অরূপকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে বাকি সাতজনের নাম জানতে পারে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, সাতজনের মধ্যে কেউ কেউ চিঠি দিত, কেউ ফোন করত। ধৃত সাতজনকে শুক্রবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। কার্তিক ও বারিদকে ১৪ দিন জেল হেফাজত ও বাকি পাঁচজনকে তিনদিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। বেলপাহাড়ির এসডিপিও উত্তম গরাঁই বলেন, ‘‘মূলমাথা অরূপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সাতজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। এই চক্রের আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তাই ধৃত পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ এসডিপিও আরও জানান, ধৃতরা নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের কোনও ব্যাপার নেই। পর্যটকরা নির্ভয়ে আসতে পারেন।