মন্দিরে পাঁচিল তৈরির জন্য ইট ফেলা হয়েছে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই তোলাবাজির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় বৈঠক, সভাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তিনি। তোলা নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন এক তৃণমূল কাউন্সিলর।
এ বার ফের ১২ লক্ষ টাকা তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম থানার খড়িকামাথানি এলাকায়। অভিযোগের তির তৃণমূলের স্থানীয় পাঁচ নেতা-কর্মীর দিকে। মঙ্গলবার রাতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতরা হলেন কৌশিক পাত্র, বিলাসচন্দ্র মহাকুল, হরিপদ পাত্র, পিনাকীরঞ্জন মহাকুল ও সুজিত বারিক। কৌশিকবাবু হলেন নয়াগ্রাম ব্লকের খড়িকামাথানি অঞ্চল তৃণমূলের খড়িকা (দক্ষিণ) বুথের সম্পাদক। বিলাসবাবু তৃণমূলের খড়িকা (উত্তর) বুথের সম্পাদক, হরিপদবাবু খড়িকা (উত্তর) বুথের সভাপতি। পিনাকীবাবু ওই বুথ কমিটির সদস্য। সুজিতবাবু হলেন তৃণমূলের স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে শাসকদল। বুধবার তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক কমিটির বৈঠক ডেকে তড়িঘড়ি ওই পাঁচ নেতাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে খড়িকামাথানি গ্রামের এক ব্যবসায়ী আনন্দমোহন পানিয়া স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার হন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আনন্দবাবুর ছেলে ও বৌমাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। গত জুন মাসের গোড়ায় তিনজনই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। এরপর আনন্দমোহনবাবু সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে এলে তৃণমূলের স্থানীয় পাঁচ নেতা ও তাঁদের দলবল বাধা দেয় বলে অভিযোগ। খড়িকামাথানির ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় আনন্দমোহনবাবুর একটি লোহার সরঞ্জামের (হার্ডওয়্যার) দোকান রয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বাধায় সেটিও তিনি খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ। আনন্দমোহনবাবুর দাবি, গ্রামে থাকতে হলে ও দোকান খুলতে গেলে ওই পাঁচ জন ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। আনন্দমোহনবাবুর দাবি, ওই নেতারা জানিয়েছিলেন, গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্ত মতো টাকার কিছুটা অংশ মন্দিরের কাজে লাগানো হবে। ফলে, গ্রামবাসীর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ভেবে গত শুক্রবার তিনি পাঁচ নেতার হাতে পুরো টাকা তুলে দেন।
মঙ্গলবার খড়িকামাথানি গ্রামের শীতলা মন্দিরের পাঁচিল তৈরির জন্য ইঁট ফেলার সময়ই গণ্ডগোল শুরু হয়। সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর। মঙ্গলবার বিকেলে শীতলা মন্দিরে জড়ো হন গ্রামবাসী। পাঁচ নেতার কাছে জবাবদিহি চান গ্রামবাসী। ডেকে পাঠানো হয় আনন্দমোহনবাবুকে। তিনি সর্বসমক্ষে জানিয়ে দেন, গ্রামে থাকার জন্য এবং মন্দির সংস্কারের জন্য তাঁর কাছ থেকে ওই পাঁচ নেতা ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসী। পাঁচ নেতাকে মারধর করে মন্দিরের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পাঁচজন নেতা-কর্মীকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতিতে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ফেরত দেন ওই নেতা-কর্মীরা। বাকি টাকা পরে ফেরতের লিখিত মুচলেকা দেন তাঁরা। আনন্দমোহনবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বুধবার ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রত্যেককেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই পাঁচ নেতা-কর্মীর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন এলাকাবাসী। অবাধে তোলাবাজি চালাতেন তাঁরা। তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তর অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন পাঁচ জন। খুনের অভিযোগ উঠলেও কোনও পরিবারকে এ ভাবে গ্রামছাড়া থাকার বিষয়টিও ঠিক হয়নি বলে মানছেন একাংশ গ্রামবাসী।
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা অবাধে তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। নিচুতলার ওই নেতারা উপর তলার কাদের নির্দেশে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করেছিলেন, সেটাও তদন্ত করে পুলিশ প্রকাশ্যে আনুক।’’
তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত দাবি করেছেন, “পুরোটাই গ্রামের বিষয়। এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ওই পাঁচজনকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “এ ব্যাপারে ব্লক কমিটির কাছ থেকে উপযুক্ত রিপোর্ট পেলে পদক্ষেপ করা হবে।”