‘ওঁরা আর তৃণমূলের কেউ নন।’ অভিষেকের সভার আগে বলে দিল তৃণমূল। —ফাইল চিত্র।
৩ ডিসেম্বর আসতে আর ঠিক ৩ দিন বাকি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর পর তৃতীয় বার শিশির-শুভেন্দু অধিকারীর পাড়ায় সভা করতে আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের লক্ষ্য অন্তত ১লাখ লোক দিয়ে কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজের মাঠ ভরানো। তবে ওই সভায় আমন্ত্রিত নন কাঁথিরই সাংসদ শিশির অধিকারী। দলের তরফে ডাক পাননি শিশির-পুত্র তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দুও। এ নিয়ে প্রশ্ন করতে রাখঢাক না করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘ওঁদের দলের নেতা বলে মনেই করি না।’’
অভিষেকের সভাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শিশির-দিব্যেন্দুর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’। আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে অধিকারী পরিবারের দুই ‘তৃণমূলী’র কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। অন্য দিকে, তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জনকে অধিকারীদের নিয়ে প্রশ্ন করতেই প্রতিক্রিয়া এল, ‘‘৩ ডিসেম্বরের সভার টার্গেটই তো শান্তিকুঞ্জ।’’
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে কাঁথি থেকেই অধিকারী পরিবারকে নিশানা করেছিলেন অভিষেক। তাঁর ‘তোর বাপকে গিয়ে বল’ মন্তব্য নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তৃণমূলত্যাগী শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন ‘তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড’ তাঁকেই কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। যদিও সে অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এর পর গত ১বছরে বারবার একে অন্যকে বিঁধেছেন তাঁরা। আর ততই তৃণমূল থেকে দূরত্ব বেড়েছে শিশির এবং দিব্যেন্দুর। এমনকি, বিজেপির সভায় উপস্থিত থাকার পর শিশিরের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনকে হাতিয়ার করে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই অভিষেককে দিব্যেন্দু ‘শান্তিকুঞ্জ’-এ চায়ের নিমন্ত্রণ জানালেও তৃণমূল যে তাঁদের সভায় ডাকবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। তবে ক’দিন আগে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর পর বরফ গলার সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকে।
শিশির ও দিব্যেন্দুকে আমন্ত্রণ না করা প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরির মন্তব্য, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।’’ তার পরেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কাউকে ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাবে। আমরা সভা থেকে দলের কথা বলব। তবে এটা তো রাজনৈতিক সভা। তাই বিরোধী দলনেতার (রাজ্যের) নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার প্রতিবাদ তো থাকবেই।’’ মন্ত্রী অখিল গিরির পুত্রের সংযুক্তি, ‘‘আমরা মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাব। কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হব, এটাই স্বাভাবিক। আর যেখানে সভা হচ্ছে তার চারপাশে কে কোথায় বসবাস করেন, এটা দেখা আমাদের কাজ নয়।’’
এখানেই থামেননি সুপ্রকাশ। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি না অধিকারী পরিবারের কেউ আর তৃণমূলের রয়েছে। ওঁরা (পড়ুন শিশির এবং দিব্যেন্দু) তৃণমূলের স্ট্যাম্প প্যাড ব্যবহার করেন। কিন্তু তৃণমূলের সাংসদ হয়েও কোনও দিন দল অথবা দলনেত্রীর জন্য কথা বলেন না।’’ তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সমস্ত জায়গায় দলের দুই সাংসদ দলের বিরোধিতাই করে গিয়েছেন। তাই এই সভায় আর সৌজন্য দেখিয়ে দুই সাংসদকে আমন্ত্রণ জানাব না।” সুপ্রকাশের টিপ্পনী, “আমরা ওঁদের দলের সাংসদও মনে করি না। তাই এই সভায় ডাকারও প্রশ্ন নেই।”
অন্য দিকে, কলেজ মাঠে তৃণমূলের সভা করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা অরূপ দাসের অভিযোগ, “শান্তিকুঞ্জকে বিব্রত করতেই কলেজ মাঠে সভা করা হচ্ছে। তৃণমূলের আসল উদ্দেশ্যই হল অধিকারীদের গালাগাল দেওয়া।” তৃণমূল সভায় লোক ঢোকানোর জন্য কলেজের পাঁচিলের একাধিক জায়গা ভেঙে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অরূপ। তাঁর টিপ্পনী, ‘‘কাঁথিতে এখন কলকাতার নেতানেত্রীরা ঘুরছেন। এঁদের সঙ্গে কাঁথির মানুষই নেই। শুধু বাইরে থেকে মানুষকে বয়ে এনে মাঠ ভরাতে হচ্ছে।”