Unnatural Death

নেশা ছিল প্রতিমা বানানো, সে জন্য মাটি আনতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল পাঁশকুড়ার দুই পড়ুয়ার

প্রতিমা তৈরির জন্য মাটি আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দীপেন্দু। কথা ছিল, বন্ধু রূপঙ্করকেও ডেকে নেবে সে। কিন্তু রাতে খবর আসে, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দুই বন্ধুরই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১২
Share:

ভোগপুর স্টেশন। — ফাইল ছবি।

প্রতিমা তৈরি করা ছিল নেশা। ১৫ বছরের দীপেন্দু ইদানীং মেতে ছিলেন সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজে। আর এ কাজে তাকে সাহায্য করত অভিন্ন হৃদয় বন্ধু রূপঙ্কর। কিন্তু একটা রাত সব কিছু বদলে দিল। হাওড়া-খড়্গপুর দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের পাঁশকুড়া থানার ভোগপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হল দুই পড়ুয়ার দেহাংশ। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দু’জন।

Advertisement

ভোগপুর কেনারাম হাই স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া দীপেন্দু এবং রূপঙ্কর। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলত প্রতিমা তৈরির কাজ। সূত্রের খবর, বুধবার রাতে ঠাকুরের জন্য মাটি আনতে যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দীপেন্দু। পথে রূপঙ্করকেও ডেকে নেওয়ার কথা। তার পর থেকে দু’জনেরই আর কোনও খোঁজ নেই। বাড়ির লোকজন খোঁজাখুজি শুরু করলে জানা যায়, রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই বন্ধুর। কিন্তু কেন তাঁরা রেললাইনের উপরে গেল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। খবর পেয়ে পাঁশকুড়া জিআরপি দুই কিশোরের দেহাংশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়।

দীপেন্দুর বাবা মধুসূদন সাঁতরা বলেন, ‘‘ছেলেটা গত তিন-চার বছর ধরে বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করত। কাজে সাহায্য করত রূপঙ্কর। এ বার ২২টি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছিল। বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ছেলে প্রতিমার মাটি আনতে বেরিয়ে যায়। তার পর যে কী হল কিছুই বুঝতে পারলাম না। রাতে স্থানীয়দের থেকে খবর পেলাম, দুই বন্ধুর দেহ ট্রেনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

দীপেন্দুর দিদি মল্লিকা বলেন, ‘‘ভাই জানিয়েছিল, ঠাকুরের মাটি আনতে যাবে। পাশাপাশি বন্ধুকে ডাকতে যাবে প্রতিমায় রং করার কাজে সহযোগিতার জন্য। কিন্তু রাত প্রায় সাড়ে ১০টা বেজে গেলেও ভাই বাড়ি ফেরেনি। এই সময় তাঁর ফোনে বার বার কল করেছি। কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। কিছু সময় পর জানতে পারি, ভাই ও তার বন্ধু ট্রেনে কাটা পড়েছে।’’

রূপঙ্করের বাবা সহদেব কোলে বলেন, ‘‘ছেলে টিউশান পড়তে গিয়েছিল। বলেছিল, বন্ধুর প্রতিমা তৈরির কাজে সাহায্য করতে যাবে। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় আমরা খোঁজখবর করতে শুরু করি। রাতের দিকে ছেলের মৃত্যুর খবর পাই। ওরা এত রাতে ট্রেন লাইনে কী করছিল বা ট্রেন আসতে দেখেও কেন তাঁরা সরে গেল না বুঝতে পারছি না।’’

দীপেন্দুর পরিবারের আফসোস, নিজের উদ্যোগে ছেলেটা প্রতিমা কারিগর হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এ বার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ একাধিক জায়গায় পাঠানোর জন্য ২২টি প্রতিমা বানিয়েছিল। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই স্বরস্বতী পুজো। বিদ্যার দেবীর আরাধনায় মেতে উঠবেন সকলে। শুধু আলো জ্বলবে না দীপেন্দু আর রূপঙ্করের বাড়িতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement