ধান বিক্রিতে ফড়ে-রাজ বন্ধ হয়নি এখনও

রাজ্য সরকার ধান কেনা শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যের সব প্রান্তের চাষির মুখে হাসি কই? প্রশাসনিক নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হল না ধান কেনার প্রক্রিয়া। কম হলেও এ বারও ফড়েদের দাপট, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। সরেজমিনে আনন্দবাজার।রাজ্য সরকার ধান কেনা শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যের সব প্রান্তের চাষির মুখে হাসি কই? প্রশাসনিক নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হল না ধান কেনার প্রক্রিয়া। কম হলেও এ বারও ফড়েদের দাপট, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। সরেজমিনে আনন্দবাজার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫
Share:

ধান ফলিয়েছেন চাষি। কিন্তু লাভের গুড় খাচ্ছে কে?

Advertisement

এ বার সহায়ক মূল্য (উৎসাহ ভাতা-সহ প্রতি কুইন্টাল ১৭৭০ টাকা) অনেকটাই বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সরকারকে ধান বিক্রির টাকা কি সব ক্ষেত্রে আসল চাষির কাছে যাচ্ছে? এই প্রশ্নে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে চাষিদের ক্ষোভ সামনে আসছে। অনেক জায়গাতে উঠছে ‘ফড়ে’ বা মধ্যসত্ত্বভোগীদের ‘সক্রিয়তা’র কথাও। সরকারি কর্মীদের একাংশও মানছেন, সর্ষের মধ্যের ভূত এখনও পুরোপুরি যায়নি।

যেমন নদিয়ার বীরনগরের রাধানগর মান্ডিতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দিকে যে সব চাষি ধান বিক্রি করেছেন, তাঁদের অনেকেরই পদবি সাউ বা সাধুখাঁ! ওই ধান মান্ডি থেকে চলে যাচ্ছে হবিবপুরের একটি চালকলে। ওই চালকলের মালিকের পদবিও সাউ এবং সাধুখাঁ। এলাকার লোকজনের দাবি, ওই দুই পদবির যাঁরা ধান বিক্রি করেছেন, তাঁরা আদতে চালকল মালিকেরই আত্মীয়-স্বজন। চালকল মালিক কৃষ্ণ সাউ অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘সাউ পদবি এলাকার বহু লোকের আছে। আর

Advertisement

আমার কোনও আত্মীয় ধান দেবে না, এটা হতে পারে না।’’

বর্তমান ব্যবস্থায় প্রত্যেক চাষি সর্বাধিক ৯০ কুইন্টাল ধান সরকারকে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু নদিয়ার চাষিদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, চালকল-মালিকেরা খোলা বাজারের থেকে কম দামে ধান কিনে এনে ৯০ কুইন্টালের ‘বিল’ করছেন। ধান কেনায় যুক্ত এক আধিকারিকের আক্ষেপ, চালকল-মালিকেরা এসে অনেকের নাম দিয়ে যাচ্ছেন। আর ৯০ কুইন্টাল করে ধান বিক্রির বিল করতে বলছেন। ‘মাস্টার রোল’-এ সে ভাবেই ওঁদের মনোনীত লোকের নাম তুলতে হচ্ছে। এক চালকল-মালিক তো সে ভাবে ধানই কিনছেন না। তিনি বর্ধমান থেকে কম দামে চাল কিনে নদিয়ায় এনে তা সরকারের কাছে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ।

জেলার এক ক্রয় আধিকারিকের বক্তব্য, ‘মাস্টার-রোল’ দেখলে বোঝা যাবে, চালকল-মালিকের পদবির সঙ্গে মিল রয়েছে, এমনই চাষিদের থেকেই ৯০ কুইন্টাল করে ধান কেনা হয়েছে। আসলে ওঁরা চাষি নন, চালকল-মালিকের আত্মীয়। নদিয়া জেলা খাদ্য দফতরের এক কর্মীও বলেন, ‘‘আমি বহু মাস্টার-রোল দেখেছি। চালকল ও ফড়েদের থেকে পুরো ৯০ কুইন্টাল ধান কেনা হচ্ছে। প্রকৃত চাষিদের কাছ থেকে ১৫-২০ কুইন্টালের বেশি ধান কেনাই হচ্ছে না।’’

মঙ্গলবারই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট-২ ব্লকের রঘুনাথপুর কিসান মান্ডিতে ৪০ জন চাষির হয়ে একাই ৫০০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে এসেছিল এক ব্যক্তি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নিতে না-চাওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তকে অবশ্য পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু নানা জায়গায় প্রক্রিয়ার ফাঁক গলে যে ‘নকল’ চাষিরা কাজ হাসিল করে যাচ্ছেন, সে অভিযোগ উঠছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement