Drugs

ছ’মাস বকেয়া দেয়নি সরকার, ক্ষুব্ধ ওষুধ সরবরাহকারীরা

গত এপ্রিল মাস থেকে পাওনা বাকি রয়েছে। গত ছ’মাসে বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে কয়েক কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিপুল টাকা বকেয়া থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলিতে ওষুধ ও চিকিৎসার সামগ্রী সরবরাহ করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অধিকাংশ সংস্থা।

Advertisement

তাদের দাবি, গত এপ্রিল মাস থেকে পাওনা বাকি রয়েছে। গত ছ’মাসে বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে কয়েক কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছে। সামনেই পুজো। ফলে এখনই টাকা না-মেটালে মাস দেড়েকের জন্য সব আটকে যাবে। এ দিকে, গত আর্থিক বর্ষের পাওনার ২০ শতাংশ টাকাও সরকার এখনও মেটায়নি বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, তাদের পক্ষে লোকসানের বোঝা বয়ে চলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সংস্থাগুলির মধ্যে অধিকাংশই ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রী বণ্টনকারী সংস্থা। কিছু রয়েছে উৎপাদক সংস্থা, যারা সরাসরি জিনিস স্বাস্থ্য দফতরে দেয়। স্বাস্থ্য দফতরের তালিকাভুক্ত ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রী কেনার জন্য সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স থেকে এই সংস্থাগুলিকে দরপত্র ডেকে বাছাই করা হয়েছে। এই সংস্থাগুলির অধিকাংশের অভিযোগ, কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহার হয় না, কিন্তু অন্য রোগের ক্ষেত্রে জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রীর টাকা মেটাতে সরকার উদাসীন। ক্যানসার, ডায়াবিটিসের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যানেস্থেটিক, গ্লাভস, পেসমেকার-সহ বহু জিনিস বাবদ টাকা মেটায়নি প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি। আর গত আর্থিক বর্ষে গ্রামীণ অঞ্চলে চিকিৎসা-সামগ্রী সরবরাহ করা বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা আছে সংস্থাগুলির।

Advertisement

তাদের অভিযোগ, টাকা বরাদ্দের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাপ্রুভাল’ দেখিয়ে স্বাস্থ্য দফতর জিনিস কিনছে, অথচ টাকা মেটাচ্ছে না। এই ভাবে গত ৬ মাসে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রায় ৯ কোটি, এনআরএসে প্রায় ৬ কোটি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৭ কোটি, আরজিকরে প্রায় ৫ কোটি ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়াও, পেসমেকারের প্রায় সাড়ে আট কোটি ও গ্লাভসের সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া বাকি।

স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বাজেটে সমস্যা নেই। তহবিল থেকে নিয়মিত টাকাও দিচ্ছি। তাই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাপ্রুভালে জিনিস কেনার কিছু দিনের মধ্যেই সংস্থাগুলির টাকা পেয়ে যাওয়ার কথা। কেন পাচ্ছে না সেটা অদ্ভুত লাগছে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। সংস্থাগুলি ঠিক মতো বিল দিচ্ছে কি না বা ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট ঠিক সময়ে জমা পড়ছে কি না দেখতে হবে।’’

কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ওষুধ সরবরাহকারী, উত্তর কলকাতার একটি সংস্থার কর্ণধারের কথায়, ‘‘হাসপাতালগুলি জিনিস পেয়ে গেলেই অনলাইনে ‘গুডস রিসিভড’ নোট দিয়ে দেয় এবং সেটা দেখামাত্র আমরা বিল জমা করি। আমাদের তরফে কোনও ফাঁক নেই।’’ দক্ষিণ কলকাতার এক সংস্থার কর্ণধারের বলেন, ‘‘ক্লাবগুলিকে পুজোর জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে, অথচ ওষুধের টাকা মাসের পর মাস মেটানো হয় না। একেই কোভিড পরিস্থিতিতে ওষুধ ও কাঁচামাল ঠিক সময়ে আসছে না। তার উপরে দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য দফতর নতুন দরপত্র ডাকেনি, পুরনো দামে ওষুধ দিতে বাধ্য হচ্ছি।’’

বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে যে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান রয়েছে, সেখান থেকেও অনেক সময়ে হাসপাতালগুলি জিনিস কেনে। সেই রকম একাধিক দোকানেও দীর্ঘ কয়েক মাস স্বাস্থ্য দফতর টাকা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ। যেমন, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে গত ছ’মাসে কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ ওষুধ, গ্লাভস, নেবুলাইজ়ার মাস্ক ও অন্য চিকিৎসা-সামগ্রী কিনেছিল। তার প্রায় দেড় কোটি টাকা এখনও মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement