—প্রতীকী ছবি।
দিনভর কাজ সেরে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় এলিয়ে ওঁদের ভরসা এখন ভিডিয়ো কল। মা, বাবাদের ভিডিয়ো কলে ওঁরা দেখছেন কলকাতার পুজো।
যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেশে ফিরেছিলেন ওঁরা। কিন্তু দেশে এক বছরের মধ্যে ডাক্তারি পড়ার সুরাহা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল সায় দেয়নি। তাই অনেকেই ফের ইউক্রেনে গিয়েছেন। ওখানে মেডিক্যাল কলেজগুলি খুলেও গিয়েছে। ডাক্তারি পড়তে গেলে সে-দেশে ফিরে হাতে-কলমে কাজ করতে হবে।
ইউক্রেনের সময় অনুযায়ী, সকাল সাতটা দশে কিভের মেট্রোয় করে কাজে যাচ্ছিলেন প্রচেত বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহেই কলকাতা থেকে কিভে ফিরে যান তিনি। কিভের বোগোমোলেটস ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ষষ্ঠ বছরের পড়ুয়া প্রচেত একটি হাসপাতালে কাজ শিখছেন। সেই হাসপাতালে যেতে যেতেই মেট্রোয় বসে প্রচেত বলেন,‘‘এখানে এখন দু’ডিগ্রি ঠান্ডা। কিভে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি নেই। অফিস, কাছারি, বাজার হাট খোলা। মা, বাবার ভিডিয়ো কলেই যা পুজোর গন্ধ পাই!’’
প্রচেত জানান, মা তৃতীয়ার রাতে ভিডিয়ো কলে তাঁদের আবাসনের প্রতিমা দেখিয়েছেন। প্রচেত বলেন, ‘‘গত বারও কলকাতায় ছিলাম। রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে ঠাকুর দেখেছি।’’ টার্নোপিল শহরের ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পড়েন উত্তরপাড়ার বিতস্তা গুপ্ত। ক্লাসের ফাঁকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘পুজোর সময় সব থেকে বেশি মিস করব মায়ের হাতের লুচি, ছোলার ডাল। আর কলকাতার বিরিয়ানি! মা ভিডিয়ো কলে পুজো দেখাচ্ছে!’’ তবে বিতস্তা জানায়, টার্নোপিলে এখন যুদ্ধের আবহ নেই। সব কিছু মোটামুটি স্বাভাবিক। তবে রাত ১২টার পরে বেরোনো বারণ। বিতস্তা বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেও অবশ্য সতর্ক করার জন্য সাইরেন বাজতো। এখন সাইরেনের শব্দ সে-ভাবে শোনা যাচ্ছে না। তবে শুনতে পাচ্ছি যুদ্ধটা আবার বাড়তে পারে। তাই দুশ্চিন্তা রয়েইছে।’’
ইউক্রেনে ডাক্তারি পাঠরত বাঙালি পড়ুয়ারা কেউ কেউ আবার যুদ্ধের দেশে ফিরে যানওনি। কেউ কেউ আবার ইউক্রেনের বদলে রাশিয়া বা উজবেকিস্তানে গিয়ে ডাক্তারি পড়ছেন। ফলে কিভে ডাক্তারির বাঙালি বা ভারতীয় পড়ুয়াদের আড্ডা অনেক জায়গায় ভেঙেই গিয়েছে।
প্রচেতের কাছাকাছি কিভের অন্য ডাক্তারি পড়ুয়া প্রিয়া , আনিসুল বা দীপক। তাঁরা জানালেন, পুজোর দিনগুলো সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা কলেজেই কেটে যাবে। আলাদা করে সপ্তমী, অষ্টমী কিছুই বোঝার উপায় নেই। তবে তাঁরা ক্যালেন্ডার দেখে মনে রেখেছেন। প্রচেত বলেন, ‘‘এখনই দু’ডিগ্রি। ঠান্ডা এ বার হু-হু করে বাড়বে। এখন শুধু চাইছি, এই দেশে যেন আবার নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি খারাপ না হয়। এক বছরের মধ্যে আমাদের এখানে অনেকেরই পড়া শেষ হয়ে যাবে। তা হলে আগামী পুজো কলকাতায় কাটাব। পরের বছর আশা করি ভিডিয়ো কলে কলকাতার পুজো দেখেই সান্ত্বনা পেতে হবে না।’’