ঘাসে কোপ, বাইরের জমি মেপে সিঙ্গুরে শুরু কাজ

বৃষ্টির জল পেয়ে সবুজ ধানের চারা বেশ বেড়ে উঠেছে। জমি মাপার ফিতে হাতে সাবধানে পা ফেলছিলেন ওঁরা। হুগলি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা।এক দিকে সন্তর্পণে যখন এই কাজ চলছে, অন্য দিকে তখন মানুষ-সমান ঘাস আর কাশের বন কাটতে নেমে পড়েছে প্রশাসনের আনা যন্ত্র।

Advertisement

অত্রি মিত্র

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০০
Share:

চলছে জমি জরিপ। শুক্রবার সিঙ্গুরে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।

বৃষ্টির জল পেয়ে সবুজ ধানের চারা বেশ বেড়ে উঠেছে। জমি মাপার ফিতে হাতে সাবধানে পা ফেলছিলেন ওঁরা। হুগলি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা।

Advertisement

এক দিকে সন্তর্পণে যখন এই কাজ চলছে, অন্য দিকে তখন মানুষ-সমান ঘাস আর কাশের বন কাটতে নেমে পড়েছে প্রশাসনের আনা যন্ত্র।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো সিঙ্গুরে টাটাদের জন্য অধিগৃহীত পুরো জমি চাষিদের ফেরাতে শুক্রবার থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ল রাজ্য সরকার। এ দিন নবান্নে তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জমি ফেরতের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী মলয় ঘটক গিয়ে কাজের তদারকি করে এসেছেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘কাজ যাতে সময়ের মধ্যে শেষ হয় তার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয় সিঙ্গুরের জমিতে টাটাদের কারখানার যে শেড রয়েছে তা ভেঙে ফেললে কি কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও উত্তর পার্থবাবু দেননি। তিনি জানান, শীর্ষ আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে তা মেনে নিয়েই সরকার জমি ফেরত দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবে। তার জন্য যা কিছু করার করা হবে। এর বেশি কিছু তাঁদের জানা নেই। তাঁর দাবি, জমিতে নির্মাণ কাজ যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, পুরনো অবস্থায় তা ফিরিয়ে দিতে সমস্যা হবে না।

Advertisement

তবে বিভিন্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো জমি ফেরত দেওয়ার প্রাথমিক কাজগুলি শুরু করে দিলেও, কি কি জটিলতা তৈরি হতে পারে সে বিষয়গুলিও মাথায় রাখছে। বিশেষ করে টাটাদের কারখানার শেডটি কিছুটা হলেও সরকারের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে। কারণ, বিভিন্ন মহলে এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, টাটারা কি কোনও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সব কিছু মেনে নেবে? না কি নতুন করে কোনও আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে? সরকারের কানেও সে কথা এসেছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের কেউ-ই কোনও মন্তব্য করছেন না।

এ দিন সকালেই পে-লোডার, ঘাস কাটার যন্ত্র, বুলডো়জার নিয়ে সিঙ্গুরে হাজির হন হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এবং পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী। গোপালনগর মৌজার সাহানা পাড়া থেকে শুরু হয় জমি-জরিপের প্রাথমিক কাজ। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, চারটি মহকুমার ৮০ জন আমিনকে জমি মাপজোকের কাজে নামানো হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই রাজ্যের অন্য জেলার আমিনদের সিঙ্গুরে আনা হবে। কাজে গতি আনতে রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সমীক্ষকেরাও সিঙ্গুরে আসবেন।

কিন্তু পাঁচিলে ঘেরা ওই জমির মাপজোক বা সীমানা নির্ধারণ হচ্ছে কী ভাবে?

সাধারণ ভাবে কোনও চাষজমির মাপজোক হয় আল ধরে। আল ছাড়া জমির সীমানা বোঝা কঠিন। কিন্তু পাঁচিলঘেরা ৯৯৭.১১ একরের আলের চিহ্ন মুছে গিয়েছে ১০ বছর আগেই। সেই কারণে এ বার উল্টো পথে হাঁটছেন আমিনরা। প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের ভিতরের মাপজোক কোথা থেকে শুরু করা হবে, তা নিয়ে সমীক্ষায় নামলেও এ দিন মূলত তিনটি মৌজায় বিস্তৃত ওই জমির বাইরের জমির দাগ নম্বরকে চিহ্নিত করার কাজই শুরু করেছেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে সেই সব দাগ নম্বরকে ভূমি দফতরের মানচিত্রের সাপেক্ষে চিহ্নিত করা হবে।

জেলার এক আমিন বলেন, “প্রথমে প্রকল্পের বাইরের জমির আল ধরে আগে আমরা জমির সীমানা ঠিক করে নিচ্ছি। তার পরে সেই সীমানা ধরে ভিতরের জমির মাপজোক করব।” নবান্নের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, দিন দুয়েকের মধ্যেই রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে থাকা জমির উপগ্রহ-মানচিত্র রয়েছে, তার সঙ্গে আমিনদের নেওয়া মেলানো হবে। তার পরেই চূড়ান্ত হবে জমি চিহ্নিত করার কাজ।

পাঁচিলের ভিতরে এ দিন মূলত ঘাস কাটার কাজই হয়েছে। পাশাপাশি, যন্ত্রের মাধ্যমে রাসায়নিক ছড়িয়ে ঘাস মেরে ফেলাও হল। তবে, উঁচু ঘাস কাটতে না পারায় ফিরে গিয়েছে কলকাতা পুরসভা থেকে যাওয়া পার্কের ঘাস কাটার যন্ত্র। ক’দিনের মধ্যে আরও কিছু যন্ত্রপাতি আসবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা পুরসভার যন্ত্রও। যাচ্ছেন সেখানকার ইঞ্জিনিয়াররাও।

এই যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকল্প এলাকার মধ্যে তৈরি হচ্ছে ক্যাম্প অফিস। তৈরি হচ্ছে পুলিশ-শিবিরও। ঠিক দশ বছর আগের মতো। তবে, ফারাক একটাই। এ বার বাধা দেওয়ার কেউ নেই। এক দশক আগে যা ছিল প্রশাসনের সব থেকে মাথাব্যথার কারণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement