মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছিলেন, পুরসভার জল ব্যবহারে কোনও সমস্যাই নেই। অথচ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী মঙ্গলবার আন্ত্রিক আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে জানিয়ে এলেন, সম্ভবত জল থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাই জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ফলে মেয়র না কি স্বাস্থ্য অধিকর্তা— কার কথায় বিশ্বাস করবেন, তা নিয়ে বাঘাযতীন, নোনাডাঙা, পাটুলির আক্রান্ত মানুষেরা বিভ্রান্ত! আতঙ্কিত তো বটেই।
জলের ‘শুদ্ধতা’ নিয়ে মেয়রের উল্টো সুর কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের বক্তব্যেও। তিনি এ দিন জানান, কলকাতা অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি প্রাচীন শহর। মাটির নীচে পানীয় জল, নিকাশি ছাড়াও আরও অনেক পরিষেবার লাইন গিয়েছে। মাটি খুঁড়ে কাজ করার সময় বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা প্রায়ই লাইনে ফাটল ধরিয়ে ফেলেন। এর ফলে পানীয় জলে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট এলেই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে।
গত তিন দিন একাধিক বার আক্রান্ত এলাকায় গিয়েছিলেন শোভনবাবু। এ দিন তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত জবাব দেননি এসএমএসেরও। সোমবার মেয়র পেটের অসুখের পিছনে আবহাওয়ার পরিবর্তন, মানুষের ভয়ভীতিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তার পরে মেয়রকে আন্ত্রিক পরিস্থিতি থেকে আপাতত দূরে রাখা হল কি না, পুরসভার অন্দরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: আন্ত্রিকের পুর-তথ্যে ফারাক
এ দিকে, পুরসভার জল দূষিত না শুদ্ধ, সেই সংশয়ে এলাকায় বোতলে ভরা জলের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। পুরসভার জলও বোতলে ভর্তি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সন্তোষপুরে জলে পোকা পড়েছে বলে পুরসভায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। বিক্রি বেড়েছে জলশোধন যন্ত্রের। বাড়িতে মজুত রাখার জন্য প্যাকেটের পর প্যাকেট ওআরএস লাইন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। এ দিনও ১০১, ১০২, ১০৫, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১০৯ ও ১১০ ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অসুস্থ মানুষজন ভিড় করেন। রাত পর্যন্ত বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন।
অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেও। অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র এ দিন বলেন, ‘‘যা পরীক্ষা করেছি, তাতে এখনও কলেরার লক্ষণ পাইনি। নাইসেডে নমুনা পাঠানো হয়েছে। পরশু রিপোর্ট পাব। তবে জলে ব্যাকটিরিয়ার পাশাপাশি ভাইরাস রয়েছে কি না, পুরসভাকে তা-ও পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছি।’’