বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, নারদ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের উপরে তিনি কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করছেন না।— ফাইল চিত্র।
বারবার চার বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার পরেও আজ, বুধবার তাঁকে ফের তলব করেছে মুচিপাড়া থানা। এই অবস্থায় নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল হুমকি দিয়েছেন, কলকাতা পুলিশ হেনস্থা বন্ধ না-করলে তিনি আজ থেকেই অনশনে বসবেন। পুলিশের দেওয়া খাবার খাবেন না। হয়রানি বন্ধ না-করলে খাবেন না নিজের ওষুধও।
ম্যাথুর কথায়, ‘‘নারদ নিউজের স্টিং অপারেশন সংক্রান্ত সব তথ্য তিনি ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন। কলকাতা পুলিশ প্রয়োজন মনে করলে এই ব্যাপারে সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। প্রয়োজনে আমাকে গ্রেফতার করুক। তোলাবাজির মামলায় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করলে জেলে গিয়েই অনশন শুরু করে দেবো।’’
তোলাবাজির একটি মামলায় নারদ-প্রধানকে মঙ্গলবার ফের ডেকে পাঠিয়েছিল মুচিপাড়া থানা। সেখানে ঢোকার আগে নারদ-কর্ণধার বলেন, ‘‘তোলাবাজির ষড়যন্ত্র কে করেছে, সেটা তো আমারও জানা দরকার। কলকাতা পুলিশ চাইলে আমার নার্কো-অ্যানালিসিস পরীক্ষা করুক।’’
লালবাজারের পুলিশকর্তাদের দাবি, মুচিপাড়া থানার তদন্তকারীরা ম্যাথুকে আদৌ হেনস্থা করছেন না। তাঁর কাছে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে। যত ক্ষণ না সেই উত্তর মিলছে, জিজ্ঞাসাবাদ চলবে। হেনস্থার ব্যাপারে ম্যাথুর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা জানান, এ দিন তোলাবাজির মামলার তথ্যপ্রমাণ হিসেবে নারদ-প্রধানকে একটি আইফোন আনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা আনেননি।
ম্যাথু অবশ্য জানান, মুচিপাড়া থানার পুলিশ তাঁকে পুরনো একটি আইফোন নিয়ে আসতে বলেছিল। ‘‘কিন্তু আমি মাঝেমধ্যেই এই ধরনের ফোন বদল করি। ওই ফোন কোথায় রয়েছে, তা আমার স্ত্রী হয়তো বলতে পারবেন। পুলিশকে তা জানিয়েছি,’’ বলেন নারদ-প্রধান। তাঁর অভিযোগ, নারদের বিষয়ে এবং তোলাবাজির অভিযোগ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে এ দিন তাঁকে মাত্র কুড়ি মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তদন্তকারী অফিসারেরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সওয়া ৭টা পর্যন্ত তাঁকে থানায় বসিয়ে রাখেন।
ম্যাথু জানান, ওই তোলাবাজির মামলার বিষয়ে তদন্তকারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদই করছেন না। নারদ স্টিং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়েই নানা প্রশ্ন করছেন এবং নারদ সংক্রান্ত নথি দাখিল করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। নারদ সংক্রান্ত নানা তথ্য জমা দেওয়ার জন্য তাঁকে বারবার ই-মেল করা হয়েছে।
মুচিপাড়ার থানার পুলিশ এ দিন দুপুরে ম্যাথুকে নিয়ে একটি জায়গায় গিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের শেষে ম্যাথু সন্ধ্যায় জানান, কয়েকটি নথির প্রত্যয়িত প্রতিলিপি (ফোটোস্ট্যাট কপি) করানোর জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ম্যাথু জানান, নিদিন চন্দ্রা নামে তাঁর সংস্থার এক কর্মী ছিলেন। ওই কর্মী তাঁর অফিস থেকে একটি ল্যাপটপ এবং কিছু নথি চুরি করেছেন, এই সন্দেহে ম্যাথু ১৩ জানুয়ারি তাঁকে বরখাস্ত করে একটি ই-মেল পাঠান। এ দিন সেই ই-মেলের প্রত্যয়িত প্রতিলিপিও তিনি পুলিশকে দেন। ম্যাথু জানান, ওই চুরির ব্যাপারে দিল্লির সফদরজঙ্গ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। দিল্লি পুলিশ চুরির তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ এ দিন তাঁর ২০১৪-’১৫ সালের আয়কর রিটার্নের নথি জমা দিতে বলেছিল। তিনি তা দিয়েছেন।
আজ বেলা ১১টায় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দফতরে যাবেন ম্যাথু। তার পরে কৌঁসুলির সঙ্গে পরামর্শ করতে যাবেন কলকাতা হাইকোর্টে। সেখান থেকে ফের হাজিরা দেবেন মুচিপাড়া থানায়।