হোগলা গ্রামে মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভিটে। নিজস্ব চিত্র।
বঙ্গভূমের বদলে অসম— লালকেল্লায় ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় বদলে গিয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থান। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রধানমন্ত্রীর এমন ভুলে বিস্মিত মাতঙ্গিনীর জন্মভূমি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের হোগলা গ্রামও। তাঁদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসছে, আর এক প্রধানমন্ত্রী, ইন্দিরা গাঁধীর মাতঙ্গিনী স্মরণ।
১৯৪২-এর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে’ তমলুক আদালত এবং থানা দখল অভিযানের সময় পুলিশের গুলিতে বানপুকুরের কাছে নিহত হন গাঁধী-বুড়ি মাতঙ্গিনী। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ছিল আলিনান গ্রামে। দেশের স্বাধীনতা দিবসে সেই বীরাঙ্গনা সম্পর্কে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ভুল তথ্য দেওয়ায় তা দ্রুত সংশোধনের দাবি তুলেছেন মাতঙ্গিনীর উত্তরসূরি এবং তাঁর এলাকার লোকেরাও।
এখন আলিনানে থাকেন মাতঙ্গিনীর উত্তরসূরিরা। সম্পর্কে মাতঙ্গিনীর নাতি তথা স্থানীয় কাখরদা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য যতীন্দ্রনাথ হাজরা মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘ওঁকে সম্মান জানাতে এই গ্রামে ১৯৭৩ সালে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। আর দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মাতঙ্গিনী হাজরাকে অসমের মানুষ বলে উল্লেখ করছেন। এটা আমাদের কাছে খুবই বেদনার।’’ মাতঙ্গিনীর পরিবারের আর এক সদস্য তথা শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজেশ হাজরার কথায়, ‘‘বীরাঙ্গনার পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই ভুল সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে হবে।’’
জেলা সদর তমলুক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হোগলা এবং আলিনান গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে মাতঙ্গিনীর স্মৃতি। মূর্তি, স্মারকে শ্রদ্ধার নানা নিদর্শন। হোগলা গ্রামে মাতঙ্গিনীর জন্মস্থলে রয়েছে স্মৃতি কুটির। তার অদূরেই থাকেন মোহনলাল দণ্ডপাট। পেশায় চিকিৎসক মোহনলাল মাতঙ্গিনীকে নিয়ে বইও লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছি। মাতঙ্গিনীর বিষয়ে বলার আগে ওঁর আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’ হোগলা গ্রামে শহিদ মাতঙ্গিনী স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সামন্তও বলেন, ‘‘খুব লজ্জাজনক। সংশোধন করা উচিত।’’
সোমবার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ‘খেলা হবে দিবস’ পালনে রামচন্দ্রপুর হাইস্কুলে এসেছিলেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা বাংলার মানুষকে অপমান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’