পেটের ব্যথায় হাজিরা আটকে গেল মাতঙ্গের

গ্রেফতারের রাতেই জোড়া হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের পেটের ব্যথা কমছে না। তাই শনিবার গ্রেফতার করা হলেও রবিবার তাঁকে আদালতে হাজির করাতে পারেনি সিবিআই। আদালতে হাজির না-হলেও এ দিন জামিনের আবেদন করেন মাতঙ্গ। সেই আর্জি খারিজ করে দেন আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজিতা চক্রবর্তী। সিবিআইয়ের হেফাজতে না-পাঠিয়ে ধৃতকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সুস্থ হলে আপাতত জেলেই যাবেন মাতঙ্গ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

গ্রেফতারের রাতেই জোড়া হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের পেটের ব্যথা কমছে না। তাই শনিবার গ্রেফতার করা হলেও রবিবার তাঁকে আদালতে হাজির করাতে পারেনি সিবিআই।

Advertisement

আদালতে হাজির না-হলেও এ দিন জামিনের আবেদন করেন মাতঙ্গ। সেই আর্জি খারিজ করে দেন আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজিতা চক্রবর্তী। সিবিআইয়ের হেফাজতে না-পাঠিয়ে ধৃতকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সুস্থ হলে আপাতত জেলেই যাবেন মাতঙ্গ।

সিবিআই সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, আজ, সোমবার কিংবা কাল, মঙ্গলবারেই ওই নির্দেশকে চালেঞ্জ জানিয়ে মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের দ্বারস্থ হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

সারদা গোষ্ঠীর বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাতেই তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় নীলরতন সরকার বাসপাতালে। সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয় সার্জারি বিভাগে। রবিবারেও তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল না-হওয়ায় হাসপাতাল থেকে তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়া যায়নি বলে জানান এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। এ দিন তাঁর অসুস্থতার ব্যাপারে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে। সোমবার আরও কিছু পরীক্ষা হবে।

ঠিক কী হয়েছে মাতঙ্গের?

এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা জানান, শনিবার সারা রাতই পেটে ব্যথার কথা বলেছেন মাতঙ্গ। সেই সঙ্গে পিঠেও একটা অস্বস্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। খাবারে তাঁর রুচি নেই। এই অবস্থায় তাঁকে কার্ডিওলজি, মেডিসিন এবং হেপাটোলজি বিভাগের ডাক্তারদের কাছে ‘রেফার’ করা হয়েছে। সোমবার সকালে ওই সব বিভাগের ডাক্তারেরা তাঁকে পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

কীসের ব্যথা পেটে?

“মাতঙ্গের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তার জেরে কোনও সমস্যা থেকে পেটে ব্যথা হচ্ছে কি না, হেপাটোলজি বিভাগের ডাক্তারেরা সোমবার সেটা পরীক্ষা করে দেখবেন। শনিবার রাতেই মাতঙ্গের আলট্রাসনোগ্রাফি এবং সিটি স্ক্যান হয়েছে। তবে তার কোনওটিতেই তেমন কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি,” বলেছেন এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়ার পরে একই ভাবে পিজি-তে ভর্তি হয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পরে আপাত ভাবে তাঁর শরীরে বড় কোনও অসুখের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। শেষমেশ সিবিআইয়ের চাপে তাঁকে জেলেই ফেরত পাঠানো হয়।

সিবিআইয়ের আইনজীবীরা জানান, মাতঙ্গের ক্ষেত্রে যা ঘটছে, তৃণমূল নেতা এবং রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার গ্রেফতার হওয়ার পরে ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল। সেই সময় রজতবাবুও কিছু দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে বিচারকের সামনে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রজতবাবু সুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। তখন তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানায় সিবিআই। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। ওই নির্দেশের প্রতিলিপি এ দিন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করে সিবিআই। রজতবাবুর ক্ষেত্রে আদালত কী নির্দেশ দিয়েছিল, অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তা জানাবে সিবিআই। এবং মাতঙ্গ সুস্থ হলেই তাঁকে আদালতে হাজির করানোর অনুমতি চাইবে।

মাতঙ্গের আইনজীবীরা এ দিন আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়ে জোরালো সওয়াল করেন। আইনজীবীদের বক্তব্য, সিবিআইয়ের ডাকে তাঁদের মক্কেল নিজেই তদন্তের মুখোমুখি হতে এসেছেন। তিনি তদন্তকারী সংস্থাকে এড়িয়ে যাননি। অসুস্থতার কারণে এত দিন আসতে পারেননি। তাঁকে গ্রেফতার করলেও সারদা কাণ্ডে তিনি জড়িত কি না, সেই বিষয়ে একটি শব্দও লেখেনি সিবিআই। মাতঙ্গের অসুস্থতা সংক্রান্ত নথিপত্রও বিচারকের কাছে পেশ করেন আইনজীবীরা। আদালত অবশ্য জামিনের আবেদন খারিজ করে মাতঙ্গকে ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

গ্রেফতারি ঠেকাতে ফোন

সারদা মামলায় সিবিআইকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল কেন্দ্রের এক প্রবীণ আইএএস অফিসারের বিরুদ্ধে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শনিবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে গ্রেফতারের আগে কেন্দ্রের সচিব স্তরের ওই অফিসার ফোন করে সিবিআইকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ওই প্রবীণ আমলাটি কে, সে সম্পর্কে খোলসা করে কিছু বলা হয়নি। রবিবার সিবিআইয়ের মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য ওই খবরের সত্যতা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “এমন ফোন এসেছিল বলে আমাদের জানা নেই। তবে মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে প্রশাসনের পদস্থ অফিসারদের যে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, সে খবর আমরা পেয়েছি।” যে সব প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গে মাতঙ্গ নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন, তাঁদের উপরেও সিবিআই নজরদারি চালাচ্ছে বলে কাঞ্চন প্রসাদ জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement