মাতঙ্গকে সঙ্গ দিতে পারবেন না সহায়িকা

মাস পনেরো আগে সারদা মামলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে গারদে পোরার তোড়জোড়ের মুখে তাঁর গ্রেফতারি রুখতে এক মহিলা কেন্দ্রের আমলা স্তরে দরবার করেছিলেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:১১
Share:

মাস পনেরো আগে সারদা মামলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে গারদে পোরার তোড়জোড়ের মুখে তাঁর গ্রেফতারি রুখতে এক মহিলা কেন্দ্রের আমলা স্তরে দরবার করেছিলেন বলে অভিযোগ। খ্যাতি সারদানা নামে সেই মহিলা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাতঙ্গকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তৈরি ছ’জনের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন।

Advertisement

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মাতঙ্গ দীর্ঘদিন অসুস্থ। হাসপাতালের ভিআইপি ঘরে চিকিৎসাধীন ওই প্রাক্তন মন্ত্রীর কাছে এক জন সঙ্গী থাকতে পারেন। মাতঙ্গের তরফে ছ’জনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, যাঁরা ঘুরিয়েফিরিয়ে হাসপাতালে তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেন।
আদালত সেই তালিকা থেকে মাতঙ্গের আপ্ত-সহায়িকা খ্যাতির নাম বাদ দিয়েছে সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতেই।

মাতঙ্গ আছেন যাদবপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ২০০৪ সালে তাঁর লিভার বা যকৃৎ প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। চিকিৎসকদের বক্তব্য, তার পর থেকে নানা ভাবে তাঁর শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে গিয়েছে। এই অবস্থাতেই গ্রেফতার হন তিনি। গ্রেফতারের পর থেকে তাঁর বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে এবং কাটছে জেল হাসপাতালে বা বাইরের কোনও হাসপাতালে। আদালতের নির্দেশেই মাতঙ্গ এখন যাদবপুরের ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

সেই হাসপাতালের যে-ঘরে ওই অভিযুক্ত রয়েছেন, সেখানে ২৪ ঘণ্টা এক জন সঙ্গী থাকতে পারেন। কে বা কারা ঘুরিয়েফিরিয়ে মাতঙ্গের সঙ্গে ওই ঘরে থাকবেন, তার আগাম তালিকা আদালতে দিতে হয়েছিল। নজরদারি ছিল সিবিআইয়েরও। তারা জানতে পারে, সঙ্গী হিসেবে মাতঙ্গের সঙ্গে প্রায় নিয়মিতই দেখা করছেন, কখনও কখনও থেকেও যাচ্ছেন খ্যাতি।

হাসপাতালে মাতঙ্গের সঙ্গে খ্যাতির দেখাসাক্ষাতের ব্যাপারে ৩ মে আলিপুর আদালতের বিচারকের কাছে আপত্তি জানিয়েছিল সিবিআই। আদালত সূত্রের খবর, হাসপাতালের কেবিনে মাতঙ্গের সঙ্গে থাকা ও দেখা করার জন্য ছ’জনের নামের তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের বিষয়ে সিবিআইয়ের কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি শুধু খ্যাতিকে নিয়েই।

বিচারক সে-দিন ওই আপত্তির সবিস্তার কারণ জানতে চান। সারদা মামলার তদন্তকারী অফিসার আদালতকে জানান, ওই মহিলা অত্যন্ত প্রভাবশালী। সিবিআই সূত্রের খবর, তারা ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি মাতঙ্গকে গ্রেফতার করার পরে ওই খ্যাতিই সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীকে ফোন করে গ্রেফতারি ঠেকাতে অনুরোধ করেছিলেন। অভিযোগ, তার পরেই সিবিআইয়ের এক কর্তাকে ফোন করেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ করে সিবিআই। তার কয়েক মাস পরেই স্বরাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে অনিল গোস্বামীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার এই পরম্পরা কেস ডায়েরিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ মে বিচারককে সেই কেস ডায়েরি দেখায় সিবিআই। মঙ্গলবার আদালত জানিয়ে দিয়েছে, হাসপাতালে খ্যাতির ঢোকা বারণ।

সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ অত্যন্ত প্রভাবশালী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাধিক কর্তার সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ছিল। খ্যাতি তাঁর আপ্ত-সহায়ক। মাতঙ্গের সাংবাদমাধ্যমের ব্যবসা-সহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করতেন ওই মহিলা। সমাজের উঁচু মহলে মাতঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমও ছিলেন খ্যাতি। অভিযোগ, সারদা তদন্ত চলাকালীন সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের উপরে যে-চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, তার নেপথ্যেও নাকি রয়েছেন ওই খ্যাতি।

সিবিআইয়ের দাবি, হাসপাতালে মাতঙ্গের সঙ্গে শুধু নিকটাত্মীয়েরাই দেখা করতে ও থাকতে পারবেন বলে ঠিক হয়েছে। খ্যাতি মোটেই মাতঙ্গের নিকটাত্মীয় নন। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, খ্যাতির মাধ্যমে মাতঙ্গ এই মামলার সাক্ষীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে তদন্তের অগ্রগতিতে ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন। এবং তাতে মামলার ক্ষতি হতে পারে।

মাতঙ্গের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে একাধিক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খ্যাতির বিষয়ে কোনও তথ্য তুলে ধরা হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement