সোমবার, রাজ্য প্রশাসনে বেশ কিছু রদবদল হল। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এল খাদ্যসচিব অনিল বর্মার নাম। নবান্নের একাংশের বক্তব্য, সরকারের ধান কেনার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে চেয়েছিলেন খাদ্যসচিব। তা-ও তাঁকে সরতে হল! তাঁকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের সচিব বদলি করা হয়েছে। নতুন খাদ্যসচিব হয়েছেন মনোজ অগ্রবাল।
গত পাঁচ বছর খাদ্যসচিব ছিলেন অনিল বর্মা। মূলত তাঁর হাত ধরেই ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্প (রেশন দোকানের মাধ্যমে দু’টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি) রূপায়িত হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর যে ক’জন আমলার ‘ভাল কাজের’ কথা উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তার উপরের দিকে ছিল অনিলের নাম।
খাদ্য দফতর সূত্রের বক্তব্য, সম্প্রতি একটি পুরনো রোগ নিরাময়ের কাজে হাত দিয়েছিলেন অনিল। তিনি চেয়েছিলেন, সহায়ক মূল্যে ধান বেচতে ইচ্ছুক চাষিরা পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য জমা দিন। ধান বিক্রির পর তাঁদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা চলে যাবে।
অভিযোগ, এই ব্যবস্থায় চাষিরা খুশি হলেও খেপে যান আড়তদার, ফড়ে এবং চালকল মালিকদের একাংশ। খোলা বাজারে ধানের দাম সহায়ক মূল্যের থেকে কম। ফলে কেউ কেউ নগদে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে সহায়ক মূল্যে সরকারকে বেচতেন। নয়া নিয়মের জেরে তাঁদের ব্যবসায় টান পড়ছিল। নবান্নের খবর, ধান সংগ্রহ খতিয়ে দেখতে সচিবদের জেলায় জেলায় পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরে এসে তাঁদের কেউ কেউ চালকল মালিকদের সুরেই খাদ্যসচিবের নামে অভিযোগ করেন।
নয়া খাদ্যসচিব মনোজ অগ্রবালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। মনোজের কর্মিবর্গ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রভাত মিশ্রকে। তিনি ছিলেন মৎস্যসচিব। সেখানে এলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের সচিব সুনীল গুপ্ত।
কয়েক জন জেলাশাসককেও এ দিন বদলি করা হয়েছে। বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এবং পি ভি সালিমকে যথাক্রমে স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত সচিব ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের সচিব করা হয়েছে। ওই দুই জেলার দায়িত্ব পেলেন ওয়াই রত্নাকর রাও ও অনুরাগ শ্রীবাস্তব। রত্নাকর মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ছিলেন। সেখানে যাচ্ছেন মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী। মালদহের জেলাশাসক হলেন তন্ময় চক্রবর্তী। তাঁর জায়গায় পুরুলিয়ার জেলাশাসক হলেন অলোকেশ প্রসাদ রায়। অনুরাগ শ্রীবাস্তব ছিলেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক। সেখানে এলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়শী দাশগুপ্ত। অলোকেশপ্রসাদ রায় বিধাননগর পুরসভার কমিশনার ছিলেন। ওই দায়িত্ব পেলেন পৃথা সরকার।