এই সেই পোস্টার।
মাওবাদীরা বড়সড় হামলা চালাতে পারে, এই আতঙ্কের মধ্যেই ফের সাদা কাগজে লাল কালির লিখন জঙ্গলমহলে। এবং আবার পুরুলিয়ার সেই বলরামপুর ও বাঘমুণ্ডি এলাকার মধ্যবর্তী কয়েকটি গ্রামে।
এ বারের পোস্টারে শাসক দল তৃণমূলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি— মাওবাদীরা বাংলার বুকে ফিরে এসেছে। শনিবার সকালে ডাভা, দেউলি, গড়গাঁ, নেকড়ে-র মতো গ্রামে কোথাও স্কুলের দেওয়ালে, কোথাও বন দফতরের অফিসের দেওয়ালে সাঁটা ওই পোস্টারগুলি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা।
কয়েকটি পোস্টারে সিপিআই (মাওবাদী)-এর নাম উল্লেখ করে লেখা— ‘টিএমসির দালালরা হুঁশিয়ার, বাংলার বুকে এসেছি আবার’, কোথাও আবার লেখা ‘টিএমসির দালালরা হুঁশিয়ার, জঙ্গলমহল কাঁপবে আবার’। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন তোলা হয়েছে— ‘জঙ্গলমহলের কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায়, মমতা দিদি জবাব দাও’। সেই সঙ্গে ‘মমতা দিদি কিষেণজিকে কেন মারলেন, মমতা দিদি ছত্রধর মাহাতো সমেত ছ’জনকে সাজা দিলেন কেন’ এই সব প্রশ্ন তুলেও পোস্টার পড়েছে।
বলরামপুরের গড়গাঁ প্রাথমিক স্কুল চত্বরের একটি বেদিতে দেখা যায়, বাঁশের গায়ে কালো পতাকা টাঙানো। ওই স্কুলের জানলাতেও কালো পতাকা লাগানো ছিল। যারা পোস্টার সেঁটেছে, কালো পতাকা টাঙানো তাদেরই কাজ বলে পুলিশ মনে করছে। কিছু পোস্টারে স্বাধীনতা দিবস পালন করা নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পোস্টার ও পতাকা খুলে নিয়ে যায়।
এ দিন উদ্ধার হওয়া পোস্টারগুলির মধ্যে কয়েকটি ‘জনগণের কৃষক কমিটি’ ও ‘জনগণের বিপ্লব কমিটি’-র নামে পড়েছে। ওই দু’টি কমিটির নামে আগে কখনও পোস্টার দেখা যায়নি। ফলে, যে ভাবে পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটি-কে সামনে রেখে লালগড় আন্দোলন শুরু হয়েছিল, এখন ফের তেমনই কোনও কমিটিকে সামনে রেখে মাওবাদীরা জঙ্গলমহলের মানুষের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে কি না, সেটা ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
পোস্টারগুলিতে নাগাবাহিনী ও যৌথবাহিনীকে জঙ্গলমহল থেকে সরানোর দাবিও তোলা হয়েছে। গত ছ’বছর ধরে মাওবাদী ও তাদের গণ সংগঠনগুলি এই দাবি নিয়ে সরব।
২০০৮-এর নভেম্বরে যখন জঙ্গলমহল উত্তাল, সেই সময়ে পুরুলিয়ায় কিন্তু জনসাধারণের কমিটির অস্তিত্ব সে ভাবে দেখা যায়নি। এখানে মাওবাদীদের গণ সংগঠন হিসেবে উঠে এসেছিল আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি। রাজ্যে সরকার বদলের পরে ওই সংগঠনের সদস্যদের একটা বড় অংশ তৃণমূলে চলে আসেন। অনেকে এখন দলের বড় নেতাও হয়ে উঠেছেন।