সানন্দা সিংহ।—নিজস্ব চিত্র
রাতের ‘ডিউটি’ শেষ করে সোজা চলে গিয়েছিলেন প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। নাচে প্রথম পুরস্কারও জিতলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের নার্স সানন্দা সিংহ।
তিনি জানান, সদ্যোজাতদের দেখভাল করতে গিয়ে নাচ থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন। ফের প্রথাগত নাচের প্রতিযোগিতা বা মঞ্চে নামা নিয়ে সংশয়ও ছিল। কিন্তু দিদি তনুজা সিংহের জেদেই এক মিনিটের ভিডিয়ো করে পাঠিয়েছিলেন ‘পি সি চন্দ্র মুগ্ধা নিবেদিত আনন্দবাজার পত্রিকা অদ্বিতীয়া’ অনুষ্ঠানে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্ধমান জ়োনের (দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম নিয়ে) এই প্রতিযোগী, গুসকরার পূর্বাশাপল্লির সানন্দা এ বার যোগ দেবেন কলকাতায় প্রতিযোগিতার মূল পর্বে।
গত শনিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ওই অনুষ্ঠান শেষে সানন্দা বলেন, ‘‘দশম শ্রেণির পরে প্রথাগত নাচ শেখা হয়নি। দিদির ইচ্ছাতেই ভিডিয়ো পাঠানো, বাড়িতে নাচের পিছনে সময় দেওয়া। হাসপাতালে ডিউটি করে সোজা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।’’ সানন্দার বাবা জানকী সিংহ বর্ধমান জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক। তাঁর আক্ষেপ, “দুই মেয়েরই নাচ-গানে আগ্রহ রয়েছে। পড়াশোনা শেষ করেই চাকরি পেয়েছে। আমি বাড়িতে একটু সময় দিতে পারলে মেয়েদের আরও ভাল হত। এই অনুষ্ঠান ওদের ইচ্ছেপূরণ করল।’’
আরও খবর: হিংসার আশঙ্কায় উত্তরপ্রদেশের ৭৫ জেলার মধ্যে ২১টিতে স্তব্ধ ইন্টারনেট
বীরভূমের পারুইয়ের বনশাঙ্কা গ্রামের পারমিতা কর্মকারও আসানসোলের কাল্লা হাসপাতালে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ছোটবেলা থেকে নাচ তাঁর প্রিয়। কিন্তু পড়াশোনার চাপে নাচ কিছুটা দূরে যায়। এই মঞ্চ তাঁকে আবার নাচের জগতে ফিরিয়ে এনেছে। পারমিতার কথায়, “আমার জীবনে বাবাই সব। ফেসবুক দেখে বাবা আমার ভিডিয়ো পাঠিয়েছিল। বাবার ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে পেরে ভাল লাগছে। নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করছি।’’
ধানবাদে বিয়ের পরে প্রায় ১৫ বছর প্রথাগত নাচের বাইরে ছিলেন দুর্গাপুরের বিধাননগরের নীতু মুখোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে ইচ্ছে মাথাচাড়া দেয়। এগিয়ে এসে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো পাঠান। ধাপে ধাপে লড়াই শেষ হয় ফাইনালে। স্বামী পীযূষকান্তি মুখোপাধ্যায় একটি কলেজের শিক্ষক। ছেলে দশম শ্রেণির পড়ুয়া। নীতুদেবীর কথায়, “ভরা সংসারের নানা খুঁটিনাটিতে ব্যস্ত হয়ে ১৫ বছর ধরে নাচ করতে পারিনি। এই অনুষ্ঠানে ফের নিজেকে খুঁজে পেলাম।’’