আবেদন অনেক পরীক্ষার্থীর —প্রতীকী চিত্র।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানি সমানে চলেছে। এর মধ্যেই অফলাইনে অর্থাৎ নির্দিষ্ট কেন্দ্রে কাল, শুক্রবার থেকে ৩১ অগস্ট ২০২০ সালের ডব্লিউবিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার কথা। সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই লিখিত পরীক্ষা পিছিয়ে নতুন করে পরীক্ষাসূচি ঘোষণার আর্জি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীদের একাংশ।
আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় এসে টানা পাঁচ দিন হোটেলে থেকে তাঁদের পরীক্ষা দিতে হবে। করোনা আবহে হোটেলে থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। লোকাল ট্রেন চালু না-হওয়ায় রোজ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে পরের দিন যে তাঁরা আবার কলকাতায় এসে পরীক্ষা দেবেন, সেটাও সম্ভব নয়। এই অবস্থায় অতিমারির থাবা এড়াতেই পরীক্ষা কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়া দরকার বলে ওই প্রার্থীদের অভিমত। পাঁচ থেকে ছ’হাজার প্রার্থীর ওই চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার কথা।
প্রার্থীরা জানান, পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে তাঁরা আয়োজক পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি-কে ই-মেল করেছেন। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার এক পরীক্ষার্থী জানান, কলকাতায় তাঁর কোনও আত্মীয় নেই। “আত্মীয় থাকলেও করোনার মধ্যে তাঁর বাড়িতে ওঠাও অস্বস্তিকর। আবার হোটেলে উঠলে ভয় লাগছে, যদি করোনা হয়ে যায়,” বলেন ওই পরীক্ষার্থী।
প্রশ্ন উঠছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই তো কয়েক মাস আগে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে অফলাইনে। তা হলে অতিমারির সতর্কতা বিধি মেনে ডব্লিউবিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হতে বাধা কোথায়? পরীক্ষার্থীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর মধ্যে অফলাইনে যে-সব লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, সেগুলি ছিল এক দিনের। তাই পরীক্ষা দিয়ে প্রার্থীরা সেই দিনেই বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন। কিন্তু ডব্লিউবিসিএসের লিখিত পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিন কলকাতায় থাকতে হবে। “২৭ থেকে ৩১ অগস্টের মধ্যে একমাত্র ৩০ অগস্ট ছুটি। বাকি দিনগুলিতে রোজ সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বেলা ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে হবে। কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও এই পরীক্ষার কেন্দ্র নেই। তাই কলকাতায় থেকেই পরীক্ষা দিতে হবে,’’ বলেন এক পরীক্ষার্থী।
বাঁকুড়ার এক পরীক্ষার্থী জানান, গ্রামগঞ্জে করোনার টিকা দেওয়ার গতি মোটেই কলকাতার মতো নয়। অনেক পরীক্ষার্থী আছেন, যাঁদের এখনও দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়নি। এমনকি একটি ডোজ়ও হয়নি, এমন পরীক্ষার্থীও আছেন। ‘‘শুনছি, এক-একটি কেন্দ্রে ৪০০ জন প্রার্থী পরীক্ষা দেবেন। করোনার মধ্যে শুধু তো হোটেলে থাকা নয়, খাওয়াদাওয়াও করতে হবে। সব মিলিয়ে বেশ আতঙ্কে আছি। কোনও পরীক্ষার্থী করোনা সংক্রমণ নিয়ে গ্রামে ফিরলে তাঁর দায়িত্ব কে নেবে,” প্রশ্ন ওই পরীক্ষার্থীর।
পিএসসি-র তরফে অবশ্য এ দিন পর্যন্ত পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। “পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার ব্যাপারটা ভাল ভাবেই বুঝতে পারছি। অবশ্যই অসুবিধা হবে। কিন্তু আমরাই বা আর কত পরীক্ষা পিছোব! মার্চে যে-পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল, সেটা নেওয়া হচ্ছে অগস্টে। অনন্তকালের জন্য তো পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া যায় না। এ ভাবে সব পরীক্ষা পিছোতে থাকলে সরকারি কাজকর্মই তো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে প্রার্থীদের কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে,” বলেন পিএসসি-র চেয়ারম্যান দেবাশিস বসু।