Schools

স্কুলে আসন খালি, লটারি ছাড়াই ভর্তি

লটারি ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্য ছিল কাউকে অগ্রাধিকার না-দিয়ে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিতে যাতে সকলে ভর্তি হতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। তখন ভর্তির জন্য হুড়োহুড়িও ছিল বিস্তর।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৬
Share:

এখন স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।

প্রবেশিকার পাট চুকিয়ে বাম জমানায় সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপুষ্ট স্কুলে ভর্তির জন্য শুরু হয়েছিল লটারি। এখন দেখা যাচ্ছে, লটারিরও আর প্রয়োজন পড়ছে না। ওই সব স্কুলে ভর্তির আগ্রহ এত দ্রুত হারে কমে যাচ্ছে এবং এত আসন ফাঁকা থাকছে যে, কেউ ভর্তি হতে এলেই সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

লটারি ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্য ছিল কাউকে অগ্রাধিকার না-দিয়ে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিতে যাতে সকলে ভর্তি হতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। তখন ভর্তির জন্য হুড়োহুড়িও ছিল বিস্তর। তবে কোনও একটি স্কুলের লটারিতে নাম না-উঠলে অন্য কোনও না-কোনও স্কুলে সুযোগ মিলেই যেত। এখনও বেশ কিছু সরকারি স্কুলের ভর্তি-ছবি অপরিবর্তিত থাকলেও বেশির ভাগ সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপুষ্ট স্কুলে দেখা যাচ্ছে, আসন পূরণ হচ্ছে না। ফলে সেখানে লটারির প্রয়োজনও হচ্ছে না। যে আসছে, সে-ই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।

এখন স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক শিবির জানাচ্ছে, বেশির ভাগ পোষিত ও সাহায্যপুষ্ট স্কুলই পড়ুয়ার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছে। প্রশ্ন উঠেছে, ওই সব স্কুলের উপরে নির্ভরতা কি কমছে? কমলে কেন কমছে? এই ধরনের স্কুলে প্রচুর আসন খালি পড়ে থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি স্কুলের দিকে ঝোঁক বাড়ছে কেন?

Advertisement

কসবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, কেষ্টপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজরিন নাহার জানাচ্ছেন, স্কুলে যত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার কথা, তার থেকে কম হচ্ছে। ফলে লটারির প্রয়োজনই পড়ছে না। অনেকের মতে, আশেপাশে কম বাজেটের ঢালাও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি হয়ে যাওয়াই এর অন্যতম প্রধান কারণ।

সরকার পোষিত ও সাহায্যপুষ্ট স্কুলের উপরে নির্ভরতা অনেক বেশি বিভিন্ন জেলায়। অথচ জেলাতেও ইদানীং লটারির মাধ্যমে ভর্তি কমছে। ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস বলেন, “এখন লটারির প্রয়োজনই হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে স্কুল অনেক। পড়ুয়াদের সেখানে ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছে না।” শিক্ষা দফতরের কর্তারাও জানান, জেলায় প্রচুর নতুন সরকারি স্কুল তৈরি হয়েছে। পড়ুয়ারা সবাই বাড়ির কাছের স্কুলেই ভর্তি হতে পারছে।

অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুলের অভাব যে প্রকট, সেটাও উঠে এসেছে কারও কারও বক্তব্যে। সেখানকার কুমিরমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল কম, শিক্ষকের সংখ্যাও কম। তবু বাধ্য হয়েই ছেলেমেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। আমাদের লটারি করতে হচ্ছে না।’’ গ্রামাঞ্চলে স্কুলগুলির পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশঙ্কা, এই ধারা চলতে থাকলে ছেলেমেয়েরাও আস্তে আস্তে গঞ্জ ও শহরের বেসরকারি স্কুলের দিকে আরও ঝুঁকবে বেশি হারে।

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার প্রশ্ন তুলছেন, “কিছু এলাকায় নতুন স্কুল তৈরি হলেও শিক্ষক কোথায়? পড়াশোনার নিম্ন মানের আশঙ্কায় অনেক অভিভাবকই ঝুঁকছেন বেসরকারি স্কুলের দিকে।”

শিক্ষক-নেতা তথা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকারের কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্যপুষ্ট স্কুলে মিড-ডে মিল থেকে শুরু করে সাইকেল, পোশাকের মতো নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এই ধরনের অনেক স্কুলেই পড়াশোনার মান আগের মতো নেই। ক্লাসে শিক্ষক-পড়ুয়ার অনুপাত ঠিক নেই। এই পরিকাঠামো দেখে অনেক সচেতন অভিভাবকই কষ্ট করে হলেও ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। তাই লটারির আর প্রায় প্রয়োজনই হচ্ছে না।’’ শহরাঞ্চলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বেশি, তাই সেখানে সরকার পোষিত বা সাহায্যপুষ্ট স্কুলের উপরে নির্ভরতা গ্রামের থেকে অনেক বেশি হারে কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নবকুমার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement