National Achievement Survey

National Achievement Survey: বিধি মেনে স্কুল চালুর মহড়ায় উত্তীর্ণ ‘ন্যাস’

রাজ্যের ৩১৬৫টি স্কুলে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চলে এই সমীক্ষা-পরীক্ষা। শেষ হয় ১২টা এবং সাড়ে ১২টায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৪
Share:

দেড় বছর পরে দেখা। ন্যাস পরীক্ষার শেষে উচ্ছ্বাস ছাত্রদের। শুক্রবার শহরের এক স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রায় দেড় বছর পরে স্কুলের গেটে পড়ুয়ার ভিড়। ক্লাসঘরের বেঞ্চে বেঞ্চে পড়ুয়াদের স্পর্শ। স্কুল-চত্বরের বাতাসে ছাত্রছাত্রীদের কলগুঞ্জন।

Advertisement

আসলে এটা তো পরীক্ষা। দীর্ঘ কাল বন্ধ থাকার পরে স্কুল খোলার পরীক্ষা। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে যেমন টেস্ট। আগামী মঙ্গলবার স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হওয়ার আগে, শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসই) আয়োজিত ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে (ন্যাস)-র দিনে যেন স্কুল চালু করার সেই টেস্ট বা মহড়া হয়ে গেল। কারও কারও চোখে এটা বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেকার প্রি-টেস্টের শামিল। এই পরীক্ষায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি পালিত হবে কি না, জমায়েত এড়ানো যাবে কী ভাবে— এমনই সব প্রশ্ন ছিল অনেকের মনে। এ দিন দেখা গেল, মোটের উপরে ভাল ভাবেই কেটেছে ন্যাস। স্কুলগুলির পরিকাঠামো ও পরিচালন দেখে আশঙ্কা কেটেছে সংশয়পীড়িত অভিভাবকদের অনেকেরই।

সারা বছরে স্কুলপড়ুয়ারা কতটা পড়াশোনা করতে পেরেছে, তা জানতেই এই সর্বভারতীয় ন্যাস। রাজ্যের ৩১৬৫টি স্কুলে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চলে এই সমীক্ষা-পরীক্ষা। শেষ হয় ১২টা এবং সাড়ে ১২টায়। তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির ৩০ জন করে পড়ুয়া এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছিল। যে-সব স্কুলকে নির্বাচন করা হয়েছিল, তাদেরই পড়ুয়ারা এই সমীক্ষা-পরীক্ষায় বসতে পেরেছে।

Advertisement

কলকাতা, বিভিন্ন জেলার স্কুলে ঘুরে দেখা গিয়েছে, দূরত্ব-বিধি মেনেই প্রতি বেঞ্চে দু’জন পরীক্ষার্থীকে বসানো হয়েছে। মাস্ক ছিল সকলেরই। কিন্তু স্কুলের বাইরে অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকের ভিড়ে কোভিড বিধি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বেলতলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড বিধি মেনে পরী‌ক্ষা হয়েছে। যারা পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তাদের প্রত্যেকে টিফিন পেয়েছে। নির্বাচনের পরে যারা পরীক্ষা দিল, তারা পেয়েছে দুপুরের খাবারও।’’ মুর্শিদাবাদে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৪৯টি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা হয়েছে। লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলের শুধু দশম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়া পরীক্ষায় বসেছিল। একটি বড় ঘরে প্রতি বেঞ্চে এক জন পরীক্ষার্থীকে বসানো হয়। বর্ধমান সিএমএস হাইস্কুলের (প্রাথমিক বিভাগ) প্রধান শিক্ষক পুলকেশ চৌধুরীও বলেন, ‘‘প্রতিটি বেঞ্চে এক জন পড়ুয়াকে বসানো হয়েছিল।’’ দুর্গাপুরের বিজড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজি নিজামউদ্দিনও জানান, তাঁদের পঞ্চম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়া কোভিড বিধি মেনে পরীক্ষা দিয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সাহেবখালি নিত্যানন্দ হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়া এসেছিল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শুভময় বিশ্বাস জানান, দূরত্ব-বিধি মেনে সকলকে বসানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের শতাধিক স্কুলের অন্তত চার হাজার ছাত্রছাত্রী ন্যাস দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে এই পরীক্ষা হয়েছে ১৪২টি স্কুলে। কোনও স্কুলে প্রতি বেঞ্চে বসেছে এক জন, কোনও স্কুলে দু'জন। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র বহু পরীক্ষার্থীকে মাস্ক খুলে ফেলতে দেখা গিয়েছে নদিয়ার মতো কিছু জেলার স্কুলে। বাঁকুড়ায় ১২৬টি, পুরুলিয়ায় ১৩২টি স্কুলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল কমবেশি ৪৭০০। দূরত্ব-বিধি মেনে, মাস্ক পরিয়ে তাদের বসানো হয় বলে দাবি আয়োজকদের। বীরভূমে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ১২৫টি স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৮৮৫ জন ছাত্রছাত্রী। করোনা বিধি মেনে স্কুলগুলিতে থার্মাল গান এবং অক্সিমিটারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

জলপাইগুড়ি জেলার ১৩৩, শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলায় ১২৫, মালদহে ১৫১, উত্তর দিনাজপুরের ১২৪, দক্ষিণ দিনাজপুরের ১১৯, কোচবিহারের ১১৮, অলিপুদুয়ারের ১২৯টি স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।

তবে স্কুলে ফেরার আনন্দের মধ্যেও মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে অনেক পড়ুয়া। কলকাতায় সব পড়ুয়াকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শেষে লটারিতে ৩০ জন করে বেছে নেওয়া হয়েছে। সুযোগ না-পেয়ে আক্ষেপ করেছে অনেকে। উত্তর কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শ্রেয়ন পাইন সকাল ৭টাতেই হাজির হয়, ৯টার মধ্যে ভিতরেও চলে যায়। কিন্তু ১০টা নাগাদ বেরিয়ে এসে বলল, ‘‘আমাদের ‘এ’ সেকশনের সবাই লটারিতে বাদ হয়ে গেল। আমরা পরীক্ষা দিতে পারলাম না।’’ তার মা মিনতি পাইন বলেন, ‘‘চার দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিল। কিন্তু পরীক্ষাটাই দিতে পারল না! এই নির্বাচন তো আগেই হতে পারত।’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে অষ্টম ও দশম শ্রেণির ৩৪০ জন পরীক্ষা দিতে এসেছিল। দুই ক্লাস মিলিয়ে লটারির মাধ্যমে ৬০ জন পরীক্ষা দিয়েছে। বাকিরা ফিরে যায়।’’

তবে যারা পরীক্ষা দিতে পেরেছে, তারা খুশি। কলকাতা ও জেলার স্কুলে কোথাও পরীক্ষার্থীদের গোলাপ, কোথাও কোথাও চকলেট, কোথাও বা মিষ্টির প্যাকেট, পেন দেওয়া হয়েছে। সন্তুষ্ট পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির এক পড়ুয়ার মা অভিরূপা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কত দিন অফলাইনে পরীক্ষা দেয়নি! বোর্ডের পরীক্ষা তো অফলাইনে হবে। এই পরীক্ষাটা তাই প্রি-টেস্টের মতো হয়ে গেল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement