Vice Chancellor case in Supreme Court

বোসের উপাচার্যেরা জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রশ্ন, তবে নেবেন কে?

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলা চলাকালীন কেন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল, তা নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে জবাবও তলব করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০১
Share:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

আর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যপাল বোস যাঁদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন, তাঁরা কোনও জরুরি সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন না। শুক্রবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পরেই কার্যত ধন্দে পড়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অস্থায়ী উপাচার্যেরা প্রকাশ্যে সুপ্রিম-নির্দেশ মেনে চলার কথা বললেও নিজেদের পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে একান্তে আলোচনায় সংশয় প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। শিক্ষা মহলেরও একাংশের বক্তব্য, তা হলে এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিদ্ধান্ত কে নেবেন?

Advertisement

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলা চলাকালীন কেন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করছেন রাজ্যপাল, তা নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে জবাবও তলব করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন কোনও অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করা যাবে না। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের ভাতা ও অতিরিক্ত সুবিধায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অন্তর্বর্তী উপাচার্যেরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। পাবেন বেতনও। কিন্তু কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পরে রাজভবনের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে আসেনি। অন্য দিকে, বিপাকে পড়েছেন অস্থায়ী উপাচার্যদের একাংশ। প্রশ্ন উঠছে, এখন থেকে অস্থায়ী উপাচার্যের ভূমিকা ঠিক কতটুকুর মধ্যে সীমিত থাকবে। তবে এ নিয়ে আর আলোচনার কোনও অবকাশ নেই বলেই মানছেন উপাচার্যেরা।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘এখনও আদালতের অর্ডার কপি হাতে পাইনি। অর্ডার কপি হাতে না-পেলে এখনই কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে শীর্ষ আদালত যদি এমন নির্দেশ দিয়ে থাকে, তা হলে তো এ নিয়ে আলোচনার আর কোনও জায়গা নেই। শীর্ষ আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।’’

Advertisement

শীর্ষ আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে না-পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষামহলের একাংশের মত, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় জট আরও বাড়তে পারে। অবিলম্বে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগই একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন তাঁরা। শিক্ষাবিদ তথা তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট অস্থায়ী উপাচার্যদের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে বলে শুনেছি। কিন্তু এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সমস্যা হতে পারে। এই জটের স্থায়ী সমাধান হল স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়েরও একই মত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলেই আসছি যে, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। এমন এক জন প্রশাসকের প্রয়োজন, যিনি শক্ত হাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট অস্থায়ী উপাচার্যদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম কোনও জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা হলে সেই সিদ্ধান্ত কে নেবেন? গোটা পরিস্থিতির দায় নেবেন কে? এই মুহূর্তে জরুরি, সার্চ কমিটি গড়ে দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।’’

সর্বোচ্চ বিচারালয়ের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শুক্রবার রাজভবনের সামনে শাসক তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে ছিলেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘‘আমরা যে সুবিচার চেয়েছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট তাতে সিলমোহর দিয়েছে।’’ ব্রাত্য আরও বলেন, ‘‘আমরা বার বার করে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে একসঙ্গে বসে যাতে সুষ্ঠু ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য সঠিক উপাচার্য নিয়োগ করতে পারি। কোনও তাবেদার উপাচার্য নয়! কিন্তু তা হয়নি।’’

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আচার্য সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকার ও বোসের মধ্যে সংঘাতের ফলে রাজ্যের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। গত ২১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেই সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ আদালত।

সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সব পক্ষ নাম সুপারিশ করলেও সার্চ কমিটি এখনও তৈরি হয়নি। তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গত ১ অক্টোবর রাজ্যের আরও ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন বোস। তাঁদের মধ্যে এক জন আবার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার। সেই সময়েই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এরই পাশাপাশি, রাজ্যপালের প্রতিনিধি হিসাবে যে চার জনের নাম জমা পড়েছিল, তাঁদের দু’জনের বিষয়েও শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে মিলেছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর সূত্রে। তার পর সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানিতে বড় ধাক্কা খেলেন রাজ্যপাল।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ব্রাত্যের আশা, রাজ্যপাল এ বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসতে আগ্রহী হবেন। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যপাল যাঁদের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন, তাঁদের উদ্দেশেও ব্রাত্য বলেন, ‘‘যদি আত্মমর্যাদা থাকে, তা হলে এখনই তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।’’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা এডুকেশনিস্ট ফোরামের সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়ে প্রথম থেকে যে বক্তব্য তুলে ধরেছিলাম, সেটাতেই স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement