মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সুপারিশ ছাড়াই স্কুলে গ্রুপ সি পদে ৫৭ জন নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। বেআইনি নিয়োগের দায়ে শুক্রবার তাঁদের চাকরি বাতিলও করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কার্যত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিয়োগপত্র বিলির পিছনে উঠে আসছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। জড়িয়েছেন এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহও। আইনজীবীদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, ৫৭ জনকে বেআইনি নিয়োগপত্র দেওয়ার সূত্রে কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ আরও জোরালো হল।
গ্রুপ-সি পদ সংক্রান্ত এই মামলাটির আবেদনকারী সাবিনা ইয়াসমিনের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘বাগ কমিটির রিপোর্টেই বলা হয়েছিল যে কল্যাণময় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিস ছেড়ে এসএসসি-র নতুন ভবনে গিয়ে নিয়োগপত্র সই করে শান্তিপ্রসাদ সিংহের (এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা) হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেটাই ক্রমশ সত্যি বলে প্রমাণ হচ্ছে।’’
শুধু অসৎ উপায়ে নম্বর বৃদ্ধি বা মেধা তালিকায় গরমিল নয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না-করেই কি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে স্কুলে নিয়োগপত্র বিলি হয়েছিল? এই প্রশ্ন উঠেছিল গোড়াতেই। শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে গ্রুপ-সি নিয়োগে ৫৭ জনের চাকরি সংক্রান্ত তথ্য সামনে আসার পর সেই প্রশ্নের উত্তর কার্যত মিলেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। সুদীপ্ত জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী এসএসসি-র সুপারিশ ডাকযোগে পর্ষদের কাছে যায় এবং পর্ষদের অফিস থেকেই সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থী নিয়োগপত্র পান। এখানে সে সব মানা হয়নি।
অনেকেই বলছেন, কল্যাণময় কোন জাদুবলে দীর্ঘ দিন পর্ষদ সভাপতি পদে আসীন ছিলেন তা নিয়ে বহু প্রশ্ন ছিল। নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পর পদে আসীন থাকার রহস্যেরও সমাধান সূত্র মিলছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে এই কেলেঙ্কারিতে কল্যাণময়ের সঙ্গী শান্তিপ্রসাদও কম যান না বলে তাঁদের অভিযোগ। নিয়োগ দুর্নীতির মামলাকারী পক্ষের আর এক আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও বলছেন, ‘‘হাতে হাতে নিয়োগপত্র বিলির তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কল্যাণময়, শান্তিপ্রসাদের মতো কলাকুশলী ছাড়া পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা-ও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।’’
শুক্রবারই ৫৭ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে শনিবার বেলা ১২টার মধ্যে এসএসসি-কে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। বেলা ৩টের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদও। সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন ও পর্ষদ। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই ৫৭ জন রাজ্যের ১৪টি জেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত। এ ছাড়াও, উত্তরপত্রে কারসাজি করে নম্বর বৃদ্ধি করে বেআইনি নিয়োগের দায়ে ৭৮৫ জনের চাকরি বাতিল করতেও এসএসসি এবং পর্ষদকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। তাও পালন করেছে দুই সংস্থা।