নিঃস্ব: আগুনে পুড়ে গিয়েছে ঘরের সর্বস্ব। শনিবার সকালে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এক বাসিন্দা। ই এম বাইপাসের মেট্রোপলিটন বস্তিতে। ছবি: সুমন বল্লভ।
কেউ খালের জলে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন, কেউ আরও বড় বিপদ এড়াতে গরম হয়ে ওঠা গ্যাস সিলিন্ডার খালের জলে ছুড়ে ফেলেছেন। শুক্রবার গভীর রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শনিবার দুপুরেও যেন তাড়া করে চলেছে ই এম বাইপাস লাগোয়া মেট্রোপলিটন বস্তির বাসিন্দাদের। সেখানে পুড়ে গিয়েছে ৩২টি ঘর। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কোনও মতে প্রাণ বাঁচলেও মাথা গোঁজার আশ্রয় পাবেন কোনখানে! স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির তরফে যদিও তাঁদের মাথায় ছাউনি দিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আপাতত ব্যবস্থা হয়েছে দু’বেলা খাওয়ারও।
শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ হঠাৎ দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে ই এম বাইপাস লাগোয়া মেট্রোপলিটন বস্তির কয়েকটি ঘর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের চারটি ইঞ্জিন।
প্রায় রাত সাড়ে ৩টে পর্যন্ত লড়াই করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল এবং পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কেউ হতাহত না হলেও বস্তির প্রায় সমস্ত ঘরই পুড়ে গিয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ই এম বাইপাসের ধারে মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি রেস্তরাঁর প্রায় পাশেই ফাঁকা জমিতে ওই বস্তি। সুপরিকল্পিত শহর লাগোয়া ওই জায়গায় গাড়ি যেতে পারে না। দু’পাশে খাল বয়ে গিয়েছে। তার মাঝেই এক ফালি জমিতে ঘর বেঁধে প্রায় বছর তিরিশ আগে থাকতে শুরু করেছিলেন সুলতানা বিবি, নাজমা খান, সুকুমার মণ্ডল, দোলন হাঁসদারা। সকলেই ছোটখাটো কাজ করেন। তাঁদেরই এক জন দীপঙ্কর মণ্ডল বললেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুনি ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার। পর পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দ হতে থাকে এর পরে। দেখি, আমাদের ঘরের পিছন দিকের কয়েকটি ঘরে আগুন ধরে গিয়েছে। ঘর থেকে সিলিন্ডার বার করে খালে ছুড়ে ফেলে আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়ি। কোনও মতে অন্য দিক দিয়ে উঠেছি। এর পরে দমকল এসে রাত পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে।’’
কিন্তু জানা গেল, দ্রুত পৌঁছেও বস্তির ঘর পর্যন্ত যেতেই পারেনি দমকলের গাড়ি। দু’পাশে খালের ধারে গাড়ি রেখে পাম্প দিয়ে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি জায়গা থেকে পাইপ ফেলে রিলে পদ্ধতিতে জল দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে আগুন ছড়িয়ে পড়া আটকানো গেলেও বস্তির ৩২টি ঘর বাঁচানো যায়নি। যেখানে কথা হচ্ছিল, পোড়া বস্তির সেই জায়গাতেই ডাঁই করে রাখা হয়েছে পোড়া বাসন, সাইকেল, সেলাই মেশিন। বস্তির বাসিন্দা আকলিমা বেগম বললেন, ‘‘ওই সেলাই মেশিন চালিয়ে কোনও মতে দিন চলত। এর পরে কী হবে, জানি না। লোকে বলছিল, একটি ঘরে শর্ট সার্কিট থেকে প্রথমে আগুন লাগে। কিন্তু যে ভাবে পর পর গ্যাস সিলিন্ডার ফাটছিল, তাতে আরও বড়সড় কিছু ঘটে যেতে পারত।’’
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার পুরপ্রতিনিধি জীবন সাহা বললেন, ‘‘রাতে আমার কাছেই প্রথম খবর আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাথার ছাউনি ফের কী ভাবে করে দেওয়া যায়, তা নিয়ে পুরসভায় কথা বলব।’’