গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কী নির্দেশ দেবে আদালত? সেই নির্দেশ কি শুধু মাত্র উলুবেড়িয়ার জন্যই প্রযোজ্য হবে? না কি সারা রাজ্যের ক্ষেত্রেই? এই আশঙ্কাই এখন তাড়া করছে গ্রামীণ এলাকার এসডিও, বিডিওদের একাংশকে। নিজেদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে নিজেদের সেই আশঙ্কার কথা খোলাখুলিই লিখছেন তাঁরা। ভয় একটাই— আদালত কী বলবে? কী হবে বুধবারের মামলায়?
উলুবেড়িয়ার দুই সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বিবি এবং ওমজা বিবির নথি ‘বিকৃত’ করার মামলায় জল ইতিমধ্যেই অনেক দূর গড়িয়েছে। বুধবার, ৩ অগস্ট বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে সেই মামলা ফের ওঠার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই উলুবেড়িয়ার এসডিও শমীককুমার ঘোষ, বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে, জাতি শংসাপত্র বিভাগের অতিরিক্ত ইনস্পেক্টর কৃপাসিন্ধু সামুইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত বলে রিপোর্ট দিয়েছে প্রাক্তন বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র পর্যবেক্ষণে তৈরি হওয়া কমিটি।
গত শুনানির পর বিচারপতি সিংহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ওই এলাকায় যা যা জাতি শংসাপত্র বণ্টন করা হয়েছিল, তার তালিকা জমা দিতে হবে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের সংশ্লিষ্ট আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত। সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা ওবিসি সম্প্রদায়ের। কিন্তু তদন্তের সময় তৃণমূল প্রার্থী লুৎফন্নেসা বেগম স্বীকার করে নেন, তিনি ওবিসি সম্প্রদায়ের নন। অথচ ‘অসত্য’ তথ্য দিয়ে তাঁকে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। গত শুনানিতেই স্পষ্ট হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তৃণমূল প্রার্থীর ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা নেই। কিন্তু সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। অভিযোগ, সমগ্র প্রক্রিয়ায় সরকারি আধিকারিকদের একাংশ যুক্ত ছিলেন।
এই মামলাটিতেই প্রথমে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। যদিও রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেই বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির পর্যবেক্ষণে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এখন মূল মামলাটি ফিরে এসেছে বিচারপতি সিংহের এজলাসে।
প্রাক্তন বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র পর্যবেক্ষণে সাত জন তদন্ত করছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গ্রামীণ হাওড়ার ডিএসপি মহম্মদ জসিম, সিআইডির এক ইনস্পেক্টর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো পুলিশ আধিকারিকেরা। তাঁরাই রিপোর্ট দিয়েছেন, এসডিও, বিডিও এবং জাতি শংসাপত্র বিলির দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হোক। কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এসডিও এবং বিডিও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে সাহায্য করেছেন। কমিটির তথ্যানুসন্ধানে সন্তুষ্ট আদালতও।
হুগলির শহরাঞ্চলের এক বিডিও বলেন, ‘‘বহু জায়গায় পুলিশ এবং আমলাদের চাপের মুখে অনেক কিছু করতে হয়েছে। কিন্তু এখন বিষয়টা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ বনাম আমলা।’’ বীরভূমের এক বিডিও-র বক্তব্য বলেন, ‘‘গত বার পঞ্চায়েত ভোটের সময় ভাঙড়ের মামলায় হোয়াট্সঅ্যাপে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পরে তা সারা রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য হয়ে গিয়েছিল। এ বার তেমন কিছু হলে অনেককে জটিলতার মধ্যে পড়তে হবে।’’ শুধু আমলারা নন, তাঁদের পরিবার- পরিজনদের মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে আমলাদের পরিজনেরা বলছেনও সে কথা।
যদিও নবান্ন সূত্রে খবর, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে আমলাদের অভয় দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী স্বয়ং সেই বার্তা দিয়েছেন বলেও খবর। তবে মহকুমা ও ব্লক স্তরের আমলাদের একটি অংশের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলেই খবর। তাঁরা তাকিয়ে বুধবার মামলটির শুনানির দিকে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই বিডিওদের ‘বুথদখল অফিসার’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর আবার বক্তব্য, বহু জায়গায় বিডিও-এসডিওকে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে অন্যায় করতে বাধ্য হতে হয়েছে। কিন্তু আপাতত আমলা মহলে মামলা ভয় ব্যাপক!