নিয়োগ মামলায় ধৃত মানিক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে নিজের জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। জানান, তাঁর আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। আর বেশি দিন বাঁচবেন না! ২০২৬ সালে তাঁর মৃত্যু হতে পারে বলেও আদালতে জানান মানিক। সেই সঙ্গে বলেন, তাঁর কাছে এই সংক্রান্ত চিকিৎসকের নথি রয়েছে।
মানিকের জামিনের মামলাটি বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে উঠেছিল। নিজের পক্ষে কোনও আইনজীবী নিয়োগ করেননি মানিক। নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করেন। নিজের স্বাস্থ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সালে আমার অস্ত্রোপচার করানো হয়েছিল। সেই সময় চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আমি আর ১০ বছর বাঁচব। ওই চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি আমার কাছে রয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৬ সালে আমি মরে যাব। এর মধ্যে প্রায় দু’বছর আমি জেলে খেটে ফেললাম। এ বার আমাকে জামিন দেওয়া হোক।’’
মানিককে কেন জামিন দেওয়া যাচ্ছে না, ইডির কাছে তা জানতে চেয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। শুক্রবার আদালতে তাঁর এজলাসে এই সংক্রান্ত সওয়াল করবেন কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিককে গ্রেফতার করেছিল ইডি। জামিনের আবেদন জানিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শীর্ষ আদালত মানিকের জামিন মঞ্জুর করেনি। বলা হয়েছিল, ওই জামিন মামলার ত্রুটি সংশোধন করে হাই কোর্টে আবেদন করতে হবে মানিককে। সেই মতো উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে মামলা করেন তৃণমূল বিধায়ক। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে বার বার কেঁদেও ফেলেন তিনি। মুক্তির আর্জি জানান।
উল্লেখ্য, নিয়োগ মামলায় মানিকের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রকেও হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। হাই কোর্ট পরে তাঁর স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্যকে জামিন দেয়। মানিকের পুত্র শৌভিক জামিন পান সুপ্রিম কোর্ট থেকে।
বৃহস্পতিবার মানিকের সওয়াল শোনার পর ইডির কাছে বিচারপতি জানতে চান, কিসের ভিত্তিতে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে? বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘অভিযুক্তকে কেন এখনও আটকে রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না?’’ ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি সওয়ালে জানান, মানিকের বিরুদ্ধে বিস্তারিত সওয়াল করতে কমপক্ষে দু’দিন সময় লাগবে। কারণ, নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক তছরুপের মামলায় তিনি অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পিএমএলএ আইন মেনেই তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। এর পরে আদালত শুক্রবার মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে।