মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করল ইডি। ফাইল চিত্র।
ডিএলএড কোর্সে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে অফলাইনে ভর্তির জন্য প্রায় ২১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। এই কারবারে বৃহস্পতিবার আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মনীষীদের নামে যে সব ডিএলএড কলেজ রয়েছে, সেখান থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হয়েছে মানিককে। আদালতে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেছেন, ‘‘বিভিন্ন মনীষী যেমন নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণদের নামে ডিএলএড কলেজ রয়েছে। সেই কলেজ থেকেও অফলাইনে ভর্তির জন্য ৫ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। মনীষীদের নামাঙ্কিত কলেজে ভর্তির নামে টাকা তোলা খুব দুর্ভাগ্যজনক।’’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ওই কলেজগুলির কেউ কেউ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে, আবার কোনও কোনও কলেজ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে।
যদিও এই অভিযোগ উড়িয়েছেন মানিকের আইনজীবী। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত পাল্টা বলেন, ‘‘অফলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫ হাজার টাকা করে নেওয়ার দাবি করেছে ইডি। কিন্তু কোথায় এত টাকা! হিসাব মেলাতে পারবে না ইডি। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই অফলাইন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালের পর টেট হয়নি।’’
মানিকের গ্রেফতারির পর ডিএলএড কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে বলে দাবি করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করে যে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত তিনটি শিক্ষাবর্ষে টেটের জন্য ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের থেকে নিয়মিত ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে। মূলত ডিএলএড প্রশিক্ষণের যে ৬০০টি কলেজ রয়েছে, সেখানে অফলাইনে ভর্তির জন্যই নেওয়া হত ওই অর্থ।
অফলাইনে ভর্তির জন্য কত টাকা নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে বেশ কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে। ‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন (এবিটিটিএএ)’-এর প্রেসিডেন্ট তাপস। ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমে তাপস দাবি করেন যে, ডিএলএড কোর্সে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে অফলাইনে ভর্তির জন্য প্রায় ২১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, লোক পাঠিয়ে ওই টাকা মানিক সংগ্রহ করতেন বলে দাবি করেছেন। ইডি দফতরে হাজিরা দিয়ে এই ২১ কোটি টাকার হিসাব তিনি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাপস।
অন্য দিকে, আদালতে মানিকের আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে তদন্ত করছে সিবিআই, তাতে চার্জশিট বা এফআইআরে মানিকের নাম নেই। তা হলে ইডি কেন তৎপর? মানিককে নিয়ে ইডি যে তদন্ত করছে, তার এক্তিয়ার এখনও নেই। এটা বেআইনি।’’ এর পাল্টা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা ও দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে ইডির তরফে বলা হয় যে, যাঁরা চাকরি পাননি, তাঁরাও বঞ্চিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, ২০১৪ সালে টেট অনুত্তীর্ণ ৩২৫ জনকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, পরীক্ষায় পাশ করানো হবে এবং চাকরি দেওয়া হবে। তাঁদের চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ইডির হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি, ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিৎ ভদ্র।