নিহত টুম্পা পাল ও তাঁর স্বামী সুরজিৎ। —ফাইল চিত্র।
রেগে আগুন হয়ে খুনের হুমকি দিচ্ছেন স্বামী। নির্বিকার স্ত্রী ফেসবুকে মগ্ন। পিছন থেকে গামছা পেঁচিয়ে সত্যিই স্ত্রীর শ্বাস বন্ধ করে দেওয়া হল। তার পর বিছানায় ফেলে মাথায় চপারের কোপ! পুলিশ বলছে, এটাই সংক্ষেপে চেতলার আলিপুর রোডের পাল পরিবারে খুনের চিত্রনাট্য।
নিহত টুম্পা পালের (৩৮) স্বামী সুরজিৎ (৪৬) পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, ফেসবুকই হয়ে উঠেছিল অশান্তির কারণ। অবিরাম ফেসবুকের নেশার পাশাপাশি সেখানে একাধিক পুরুষের সঙ্গে আলাপ করে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন স্ত্রী, এমনটাই অভিযোগ তাঁর। ফেসবুক নিয়ে যে মা-বাবার মধ্যে নিত্য অশান্তি হতো, সে কথা পুলিশকে বলেছেন টুম্পা-সুরজিতের ছোট ছেলেও।
বুধবার রাতে চেতলার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় টুম্পার রক্তাক্ত দেহ। ওই রাতেই সুরজিৎকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুরজিতের কথা অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই টুম্পাকে ফেসবুক থেকে বিরত থাকতে বলে আসছিলেন তিনি। টুম্পা পাত্তা দেননি। বুধবার বিকেলেও স্ত্রীকে তাঁর শেষ হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘ফেসবুক বন্ধ করো।’’
দু’দশক আগে বিয়ের পর টুম্পা এবং সুরজিৎ সাহাপুর কলোনিতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। বছর দুয়েক আগে আলিপুর রোডের বাড়িতে ভাড়া আসেন। দুই ছেলেই কলেজ-পড়ুয়া। বড় ছেলে বিয়েবাড়ি উপলক্ষে কোচবিহার গিয়েছেন। ছোট ছেলে রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের রক্তাক্ত দেহ আবিষ্কার করেন।
জেরায় সুরজিৎ অভিযোগ করেছেন, টুম্পা ফেসবুক প্রোফাইল খোলার পর থেকে ঘর-সংসার ভুলেছিলেন। নানা অপরিচিত ব্যক্তির ফোন আসত। যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে সুরজিতের সঙ্গে এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও সংসারে অশান্তি কম হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, বড়বাজার থেকে দোকানে-দোকানে মণিহারি জিনিস সরবরাহের ব্যবসা ছিল সুরজিতের। বুধবার সকালে কাজে বেরনোর আগেও একপ্রস্ত অশান্তি হয় বাড়িতে। খুনের ছক তৈরি হতে থাকে। বড়বাজারে গিয়ে ১৮০ টাকা দিয়ে একটা চপার কিনে ফেলেন সুরজিৎ। বেলা ১২টা নাগাদ ফিরে তিনি ডাল ও ডিম সেদ্ধ করে খেয়ে বেরিয়ে যান। তিনটের পর ফিরে বাড়ি ফাঁকা দেখে কাজ হাসিল করেন।
সুরজিৎ দাবি করছেন, স্ত্রীকে খুনের পরে তিনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। গলায় ফাঁস লাগাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করেন। বিফল হয়ে মোবাইল ফেলে বেরিয়ে যান। তদন্তকারীদের দাবি, হাওড়া স্টেশন দিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন সুরজিৎ।
অন্য একটি সূত্রের দাবি, তিনি লালবাজারে গিয়ে ধরা দিয়েছেন। সুরজিতের ডান হাতে ক্ষত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ব্লেডও উদ্ধার হয়েছে।
এ দিন সুরজিৎকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। খুনের চপার-সহ ৪০টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।