অর্পিতা ও পার্থ। —ফাইল চিত্র।
ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার জন্য দালালির ১৭ লাখ টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠল রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী মেকাইল আনসারি। তাঁর অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার মাদুরদহ এলাকায় একটি ফ্ল্যাটবাড়ি কিনেছিলেন পার্থ। কেনার আগে-পরে পার্থের সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও তিনি একাধিক বার দেখেছেন। কিন্তু মেকাইলের মধ্যস্থতায় ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার পর দালালি বাবদ তাঁর ‘প্রাপ্য’ ১৭ লাখ টাকা পার্থ দেননি বলে অভিযোগ। যদিও যাঁদের বিরুদ্ধে মেকাইলের এই অভিযোগ, সেই পার্থ এবং অর্পিতা এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে। তাই এ বিষয়ে তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
বীরভূমের শান্তিনিকেতনে একটি বাড়ি রয়েছে। যে বাড়ির নাম ‘অপা’। স্থানীয় অনেকের দাবি, অর্পিতা এবং পার্থের আদ্যক্ষর মিলেই এই ‘অপা’ নাম। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন এই বিষয়টির সত্যতা যাচাই করেনি। ইডি সোমবার আদালতে দাবি করেছে, পার্থ এবং অর্পিতার একাধিক যৌথ সম্পত্তির হদিস তারা পেয়েছে। মাদুরদহের বাড়িটিও তাঁরা যৌথ ভাবে কিনেছিলেন বলে অনেকে দাবি করছেন। এবং সেই বাড়ি কেনার পরে দালালির টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পার্থের বিরুদ্ধে।
এর আগে অর্পিতার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন শ্রীকান্ত নামের এক জন। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মথুরাবাটী গ্রামে অর্পিতার মামারবাড়ি পাকা করার কাজ করেছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি শ্রীকান্ত। কাজের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পেয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা। বাকি টাকা চাইতে গিয়ে হুমকি জুটেছিল বলে অভিযোগ শ্রীকান্তের। তাঁর মতো মেকাইলও মঙ্গলবার একই অভিযোগ করেছেন। প্রাপ্য টাকা দেননি পার্থ-অর্পিতা।
বর্তমানে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে থাকা মেকাইল আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, একটা সময়ে তিনি জমি-বাড়ির দালালি করতেন। সে পেশার শুরু ১৯৮৭ সাল নাগাদ। তাঁর কথায়, ‘‘রোজগার সেই সময় ভালই হত। কিন্তু ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পাকাপাকি ভাবে আমি ডোমকলে চলে যাই। আসলে, হুমকির চোটে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।’’
কিসের হুমকি? মেকাইল জানাচ্ছেন, ওই হুমকির নেপথ্যে ছিল মাদুরদহের একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। মেকাইলের দাবি, ওই ফ্ল্যাটবাড়ি তিনি কিনিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থকে। ইডি যাঁকে পার্থ ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছে, সেই অর্পিতাও ওই ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার সময় ছিলেন বলে জানিয়েছেন মেকাইল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মারফত ডিল হয়েছিল ফ্ল্যাটটির। আমার মাধ্যমে দামও ঠিক হয়েছিল। বাড়ির মালিক প্রথমে দু’কোটি টাকা চেয়েছিলেন। দরাদরির পর তা এক কোটি ৭০ লাখ টাকায় নামে। শেষ পর্যন্ত এক কোটি ৪২ লক্ষ টাকায় কেনা হয় ওই বাড়ি।’’
বাঁ দিকে পার্থ, মাঝে মেকাইল, ডান দিকে অর্পিতা।
মাদুরদহের ওই ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার সূত্রে কী ভাবে পার্থের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর, সে কথাও আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন মেকাইল। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ সালের শেষ দিকে পার্থ স্যারের সঙ্গে প্রথম বার দেখা হয়েছিল। ২০১২-১৩ সাল নাগাদ পার্থ স্যার আমাকে বলেন, তিনি একটা ফ্ল্যাট খুঁজছেন। আমাকে ফ্ল্যাট দেখে দেওয়ার জন্যও বলেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মহম্মদ নিয়াজের একটা জমি ছিল মাদুরদহে। সেখানে ফ্ল্যাটবাড়ির কাজও চলছিল। এক দিন পার্থ স্যারকে ডেকে এনে দেখালাম। ওঁর সঙ্গে অর্পিতা ম্যাডামও ছিলেন। প্রথমে পার্থ স্যার জানান, তিনি ফ্ল্যাটবাড়ির একটি তলা কিনবেন। পরে পুরো ফ্ল্যাটবাড়িটাই কেনার কথা হয়। আর গোটাটার জন্য আমি ১৭ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। দালালি বাবদ। সেই টাকাটাই আর পাইনি।’’
মেকাইলের দাবি, ২০১৩ সালে ওই ফ্ল্যাটবাড়িটির রেজিস্ট্রি হয়। দাম ঠিক হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। মেকাইলের দাবি, ‘‘আমাকে পার্থ স্যার বলেছিলেন, একটু কমিয়ে দিতে। তাতে আমারই ভাল হবে। স্যারের কথা শুনে আমি একটু কমাই। প্রথমেই এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে দেন পার্থ স্যার। পরে বাকি সাত লাখ। তবে সেটার জন্য অনেক ঘুরিয়েছিলেন। কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু আমার ১৭ লাখ টাকা আর দেননি।’’
দালালির ওই ১৭ লাখ টাকা বার বার চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ মেকাইলের। উল্টে অপরিচিত নম্বর থেকে হুমকি ফোন আসতে থাকে বলে অভিযোগ তাঁর। মেকাইল বলেন, ‘‘পার্থ স্যার আর অর্পিতা ম্যাডামকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। ওঁরা আমার ফোন ধরতেন না। এক দিন পার্থ স্যারকে বলায় উনি রেগে বলেন, ‘ভিটেমাটি ছাড়া করব।’ তার পর হাত-পা ধরে ক্ষমা চাই। ওই ঘটনার পরেও টাকা চেয়েছি একাধিক বার। পাইনি। উল্টে হুমকি আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত হুমকির জন্যই কলকাতা ছেড়ে চলে যাই ডোমকলে।’’
সেই ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ডোমকলেই থাকেন মেকাইল। ছোট্ট রেডিমেড পোশাকের দোকান খুলেছেন। কোনও মতে দিন চলে যায়। তবে ‘প্রাপ্য’ টাকা না পাওয়ার অভিঘাত এখনও বয়ে চলেছেন তিনি।