সোনালি চা বাগানে ত্রাণ বিলি।
চা বাগানের শ্রমিকদের জমির পাট্টা কীভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের কাছে প্রস্তাব চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে দলের কর্মিসভায় যোগ দিয়ে ওই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে তিনি সরকারি অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলবেন বলেও জানান। মঞ্চে বসে থাকা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকেরা পাট্টা পাবেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনারা প্রস্তাব তৈরি করে শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন। সরকারি অফিসাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। তবে রাস্তা একটা বার করতেই হবে।”
সরকারি সূত্রের খবর, চা শ্রমিকরা এখন মালিকদের তৈরি বাগানের শ্রমিক বস্তিগুলিতে থাকেন। বাগানের ওই জমিও মালিকদের লিজ দিয়েছে সরকার। তা কীভাবে শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়া যাবে সেটা নিয়েই জটিলতা চলছে। অতীতে কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী একাধিকবার বলেও ওই কাজটা করাতে পারেননি। বামফ্রন্ট আমলেও বিভিন্ন মন্ত্রীরাও ওই কথা বললেও কাজ হয়নি। সেখানে বর্তমান রাজ্য সরকার আইনি জটিলতা কাটিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে চা বাগিচা মহল।
চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কতটা আন্তরিক তা বোঝাতে এ দিন তিনি জানান, রাজ্য সরকারের ৪-৫টি রুগ্ণ বাগান রয়েছে। সেগুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে কারও চাকরি যাবে না। অনেক বাগান মিলিয়ে সাজিয়ে বড় বাগান রেখে বাকিটা ইকো-ট্যুরিজম করা যেতে পারে। এতে নতুন কয়েকটি দার্জিলিং আর তরাই ডুয়ার্স তৈরি হয়ে যাবে।” তিনি জানান, পাট্টা ছাড়া আমরাই বাগানে ১০০ দিনের কাজ শুরু করেছি। বন্ধ বাগানে দেড় হাজার টাকা করা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য শিবির হচ্ছে।
এর পরেই তিনি চা শ্রমিক সংগঠনগুলি সংগঠগুলিকে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর কথায়, “ট্রেড ইউনিয়ন মানে ‘ট্রেড’ নয়। শ্রমিদের সত্যিকারের নায্য দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা, কথাবার্তা হতে পারে।” মালবাজারের বাগান মালিক খুনের ঘটনা টেনে এনে তিনি বলেন, “কাউকে পিটিয়ে মারা ঠিক নয়। অসুবিধা, সমস্যা থাকলে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে বলুন। দলীয় নেতৃত্বকে জানান। বাইরে থেকে লোক এনে গুন্ডামি করা যাবে না। নায্য দাবিতে লড়াই করুন, খুন নয়।” প্রসঙ্গত, বকেয়া নিয়ে বিবাদের জেরে সম্প্রতি শ্রুমিকদের হাতে বাগানের মধ্যেই খুন হন মালবাজারের সোনালি চা বাগানের মালিক। ঘটনাটি নিয়ে চা মালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বেগ প্রকাশও করা হয়েছে।
বস্তুত, চা বলয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এখনও ততটা শক্তিশালী নয়। সেখানে বাম, কংগ্রেস, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ বা মোর্চা সংগঠন অনেক বেশি শক্তিশালী। বিজেপির সংগঠন সম্প্রতি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বন্ধ ডেকে সংগঠন গোছানোর কাজে নেমেছে। এই অবস্থায় আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে তৃণমূলও দলীয় শ্রমিক সংগঠনকে চা বলয়ে আরও মজবুত করতে চাইছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের ভাষণের আগেই তাই দলের সর্বভারতীয় সাধরণ সম্পাদক মুকুল রায় চা বলয়ে দলের সংগঠন ‘মজবুত’ নয় বলে স্বীকার করে নেন। মুকুলবাবু বলেন, “ডুয়ার্সের চা বলয়ে আমরা এখনও শক্তিশালী সংগঠন গড়তে পারিনি। আমাদের যে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে, সেগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা চলছে। সেই কাজ এখন পুরোদমে চলছে।’