তাদের দুই বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস। বিধানসভায় সোমবার সেই প্রস্তাব প্রত্যাশিত ভাবেই খারিজ হওয়ায় সভায় বিক্ষোভ দেখিয়ে কক্ষত্যাগ করে কংগ্রেস। কিন্তু সেই বিক্ষোভ নিরসনে তাদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাল, বুধবার দুপুরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে সেই বৈঠক হবে।
বিরোধীদের আনা মুলতবি প্রস্তাব বিধানসভায় খারিজ হওয়া নতুন নয়। কিন্তু সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিরোধী দলকে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় স্বভাবতই জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুকুল রায় যে ভাবে দিল্লি ও কলকাতায় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করছেন, তার জেরেই মমতা তড়িঘড়ি কংগ্রেসকে আলোচনায় ডেকে মুকুল-পথে কাঁটা তৈরি করতে চাইছেন বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা। বিধানসভা ভোটের আগে বাম-কংগ্রেসের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা মাথায় রেখেও বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসকে সময় দিতে তৎপর হয়ে থাকতে পারেন বলে শাসক দলের একাংশের মত।
কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা এবং কান্দির অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিধানসভায় এ দিন কংগ্রেস মুলতবি প্রস্তাব আনে। সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোর পরে ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। এর পরেই মমতার দফতর থেকে কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের কাছে ফোন যায় বৈঠকের আমন্ত্রণ নিয়ে।
পরে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপ-নেতা রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘পুরভোট ও তার পরে যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস হচ্ছে, আমাদের বিধায়কদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে, তার প্রতিকার চাওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। বিরোধী বিধায়কদের অধিকার খর্ব হচ্ছে, তা-ও তোলা হবে বৈঠকে।’’ কৃষকেরা যে কৃষিপণ্যের দাম পাচ্ছে না, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীকে কংগ্রেস জানাবে। প্রসঙ্গত, ওই দিনই কৃষিপণ্যের দাম সংক্রান্ত একটি মুলতবি প্রস্তাব আনার কথা কংগ্রেসের।
কংগ্রেস কক্ষত্যাগ করার পরেই পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ নিয়ে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব আনে বামেরা। সেই প্রস্তাবও খারিজ করে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম বিধায়েকরা এর পর কংগ্রেসের মতোই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়ে কক্ষত্যাগ করেন। শাসক দলই ওই বিস্ফোরণে দায়ী বলে অভিযোগ করে পরে বাম বিধায়ক আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ তো করলেনই না, এলাকাতেও গেলেন না! গোটা ঘটনার এনআইএ তদন্ত হোক।’’ নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকার বদলে ‘উপযুক্ত’ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন আনিসুররা।
বামেদের খারিজ হওয়া প্রস্তাব মীমাংসায় অবশ্য ‘আমন্ত্রণ’ আসেনি মুখ্যমন্ত্রীর তরফে।