দেনায় ডুবছি বাঁচান, জেটলিকে মমতা

বেড়েছে কর আদায়, বেড়েছে আয়ও। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণের বোঝা। এই অবস্থায় দেনায় জর্জরিত রাজকোষ সামলাতে এ বার অরুণ জেটলির দরবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, দেনায় ঝুঁকে পড়েছি। আমাদের বাঁচান। মমতার এ বারের দিল্লি সফরের মূল উদ্দেশ্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের ডাকে অ-বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেওয়া।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে বেরোচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: প্রেম সিংহ

বেড়েছে কর আদায়, বেড়েছে আয়ও। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণের বোঝা। এই অবস্থায় দেনায় জর্জরিত রাজকোষ সামলাতে এ বার অরুণ জেটলির দরবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, দেনায় ঝুঁকে পড়েছি। আমাদের বাঁচান।
মমতার এ বারের দিল্লি সফরের মূল উদ্দেশ্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের ডাকে অ-বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেওয়া। তারই ফাঁকে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সন্ধ্যায় নর্থ ব্লকে জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বন্যাত্রাণের জন্য আর্থিক সহায়তা থেকে রাজ্যের বিগত ঋণ ও তার সুদ শোধের উপর স্থগিতাদেশ— জেটলির সঙ্গে বৈঠকে সবক’টি প্রসঙ্গই তোলেন মমতা। বৈঠকের পরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি অর্থমন্ত্রীকে বলেছি, আমাদের রাজ্যকে বাঁচান। আমরা আর্থিক ঋণের ভারে ঝুঁকে পড়েছি। দয়া করে কিছু করুন। আগের বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সহায়তা মেলেনি।’’
চলতি বছরে রাজ্যের ঋণের বোঝা ২ লক্ষ ৯৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে নিজেই বাজেটে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মমতা আরও বেশি করে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হচ্ছেন তার কারণ, দু’বছর পরে রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা আরও সঙ্গীন হবে। কারণ বামফ্রন্ট সরকার ৫ থেকে ১৫ বছরের মেয়াদে ঋণ নিয়েছিল। দু’বছর পরে সেই ঋণের একটা বড় অংশ শোধ করার সময় আসবে। রাজ্যে যে হেতু নতুন শিল্প সে ভাবে বিশেষ আসছে না, ফলে রাজ্যের নিজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগও বেশি নেই। এই অবস্থায় রাজ্যের কাঁধে বিরাট আর্থিক দায় চাপতে চলেছে।
চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রীয় করের অংশ বাবদ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ ছাড়া অনুদান বাবদ বাড়তি ৯ হাজার কোটি টাকাও পাবে রাজ্য। রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে আগামী দু’বছর এই অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু তাতে আদৌ খুশি নয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাদের বক্তব্য, এ সব হলেও মমতার যে দীর্ঘকালীন দাবি, সেই পুরনো ঋণ ও তার সুদ মকুবের কোনও কথাই বলেনি কেন্দ্র। পাশাপাশি মমতা আজ বলেন, ‘‘এক দিকে কেন্দ্র টাকা বাড়ালেও আটটা কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া ২৪টি প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের দেয় টাকার অনুপাত বদলে গিয়েছে।

Advertisement

বেশ কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রের ভাগ কমিয়ে রাজ্যের দায় বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে আখেরে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ কমে গিয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।’’

রাজ্য সরকারের তরফে আজ জানানো হয়েছে, পুলিশের আধুনিকীকরণ প্রকল্প, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল, রাজীব গাঁধী পঞ্চায়েত সশক্তিকরণ অভিযানের মতো ৮টি প্রকল্পে রাজ্য কোনও কেন্দ্রীয় অর্থ পাচ্ছে না। মমতার কথায়, ‘‘গোটা বছর এই প্রকল্পগুলি কী ভাবে চালানো হবে, তার কিছুই ঠিক নেই। আমি বারবার করে কেন্দ্রকে এই সমস্যাগুলির কথা বলছি। ধারাবাহিক ভাবে আবেদন করে যাওয়া ছাড়া আমাদের তো করার কিছু নেই।’’

Advertisement

এরই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে কেন্দ্রীয় অনুদান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্পে। ‘মিড ডে মিল’-এ রান্নার জন্য এ যাবৎ গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি দিয়ে এসেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রক রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, ওই ভর্তুকি তুলে নেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মমতা আজ বলেন, ‘‘এটা অমানবিক সিদ্ধান্ত! বাচ্চারা খেতে পাবে না। অন্যান্য প্রকল্প থেকে টাকা কমিয়ে সরকারের উচিত ছিল বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা। তা না করে এই প্রকল্পটিই তুলে দিতে চাইছে!’’

রাজ্যের বঞ্চনার দিকটি তুলে ধরার পাশাপাশি আজ জেটলির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারের দাবিও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচনে প্রার্থী কত খরচ করতে পারবেন, তা বেঁধে দেওয়া থাকলেও কোনও রাজনৈতিক দল কত খরচ করবে, তার কোনও সীমারেখা নেই। ফলে টাকা নয়ছয় হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement