West Bengal News

বড়মার বয়স তো ৯৮! শতবর্ষ কী ভাবে? মমতার অনুষ্ঠানের আগে তীব্র আপত্তি নাতির

ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বড়মার তথাকথিত শততম জন্মদিন পালনের জন্য যে কার্ড ছাপানো হয়েছে, তাতে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালার নাম রয়েছে। তাতেই শান্তনু ঠাকুর আরও বেশি চটেছেন এবং সেই কারণেই তিনি অনুষ্ঠানের আগের দিন বড়মার জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছেন।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৩২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রাজ্য প্রশাসন প্রায় দখল নিয়ে নিয়েছে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি চত্বরের। সাজ সাজ রব গোটা এলাকায়। কারণ, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন ঠাকুরবাড়িতে। উপলক্ষ— মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবীর (বড়মা) শততম জন্মদিন উদ্‌যাপন। কিন্তু বড়মার অন্যতম প্রধান উত্তরসূরি বলছেন, ১০০ বছরে পদার্পণই করেননি বীণাপানিদেবী! মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আগের দিন বড়মার বয়সের ‘প্রমাণপত্র’ও তুলে ধরছেন তিনি।

Advertisement

বড়মার জন্মদিন ২১ সেপ্টেম্বর। এ বছর দুর্গোৎসবের মধ্যে পড়েছিল দিনটা। বড়মার পুত্রবধূ মমতাবালার শিবিরের দাবি, এটা ছিল বড়মার শততম জন্মদিন। পুজোর মধ্যে আলাদা করে উদ্‌যাপন করা হয়নি সেই ‘শততম’ জন্মদিনটা। ১৫ নভেম্বর মহাধুমধামে উদ্‌যাপনের ব্যবস্থা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাজির হচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই অনুষ্ঠানটি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতা তুঙ্গে এখন।

কিন্তু সেই তৎপরতার মতোই অনুষ্ঠানের আগের সন্ধ্যায় বিতর্কও পৌঁছে গিয়েছে তুঙ্গে। বড়মার নাতি তথা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে শান্তনু ঠাকুর বলছেন, ‘‘ঠাকুমার বয়স এখন ৯৮। এ বছর ২১ সেপ্টেম্বর ৯৮ পূর্ণ হয়েছে তাঁর। ২০১৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর ৯৯ পূর্ণ হবে অর্থাৎ আগামী বছর তিনি ১০০-য় পা রাখবেন। কোন হিসেবে এ বছর তাঁর শততম জন্মদিন উদ্‌যাপিত হচ্ছে, আমাদের জানা নেই।’’

Advertisement

বড়মা বীনাপাণিদেবী। —ফাইল চিত্র

মতুয়া ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বিবাদ বাড়তে বাড়তে এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান বা সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। প্রাক্তন সঙ্ঘাধিপতি প্রয়াত কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর দাবি করছেন তিনি সঙ্ঘাধিপতি। আর মমতাবালার দেবর মঞ্জুলকৃষ্ণের কনিষ্ঠ পুত্র শান্তনু ঠাকুর দাবি করছেন তিনিই আসল সঙ্ঘাধিপতি। মমতাবালা এখন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ। আর শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতা এখন সকলেরই জানা।

আরও পড়ুন: শবর গ্রামের দীর্ঘশ্বাসে নতুন করে কিষেণজির ভূত দেখছেন গোয়েন্দারা

ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বড়মার তথাকথিত শততম জন্মদিন পালনের জন্য যে কার্ড ছাপানো হয়েছে, তাতে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালার নাম রয়েছে। তাতেই শান্তনু ঠাকুর আরও বেশি চটেছেন এবং সেই কারণেই তিনি অনুষ্ঠানের আগের দিন বড়মার জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের একাংশের বয়ানও ঠিক এই রকমই। তবে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।

কিন্তু শান্তনু ঠাকুর দমার পাত্র নন। বড়মার বয়স যে এখনও ১০০-র দোরগোড়ায় পৌঁছয়নি, তা ‘প্রমাণ’ করার জন্য শান্তনু ‘নথিপত্র’ তুলে ধরছেন। বড়মার সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের একটি ছবি তুলে ধরেছেন তিনি। তাতে লেখা রয়েছে, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারিতে বড়মার বয়স ছিল ৭৫। সেই হিসেব ঠিক হলে, বড়মার বয়স এখন ৯৮-ই হয়। শান্তনু আরও একটি ‘নথি’ সামনে এনেছেন। সেটি হল বনগাঁর মহকুমাশাসকের দেওয়া একটি শংসাপত্র। পাসপোর্টের আবেদনের জন্য মহকুমাশাসকের থেকে ওই শংসাপত্র নিয়েছিলেন বীণাপানিদেবী। তাতে লেখা রয়েছে, বড়মার জন্ম ১৯২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। সেই হিসেবেও বড়মা-র বয়স এখন ৯৮-ই হয়।

বড়মা বীনাপাণীদেবীর ভোটার কার্ড ও মহকুমা শাসকের দেওয়া শংসাপত্র। শান্তনু ঠাকুর এই ‘নথি’ সামনে এনেছেন।

আরও পড়ুন: রোজ নাম বদলাচ্ছে ওরা, বাংলা নিয়ে চুপ কেন, তোপ মমতার

কিন্তু অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালার নাম ছাপানোয় শান্তনু অসন্তুষ্ট বলে যা শোনা যাচ্ছে, তা কতটা সত্য? শান্তনু বললেন, ‘‘কার্ড আমি দেখিনি। তবে শুনেছি সেখানে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালা ঠাকুরের নাম রয়েছে। যদি এটা হয়ে থাকে, খুব অন্যায় হয়েছে। যাঁরা ওই নাম ছাপিয়েছেন, তাঁরা ঠাকুরবাড়ির সংবিধান জানেন না। সংবিধান অনুযায়ী, সঙ্ঘাধিপতি তিনিই হতে পারেন, যাঁর শরীরে ঠাকুরবাড়ির রক্ত বইছে অর্থাৎ যিনি এই পরিবারের সন্তান। মমতাবালা ঠাকুর তো এই পরিবারের সন্তানই নন।’’

শান্তনুর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। পরে শান্তনুর জেঠু কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর বনগাঁর সাংসদ হন। দুই ভাই তৃণমূলের নেতা হয়ে ওঠার পর থেকেই ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বিবাদ বেশি করে সামনে আসতে শুরু করে। সে টানাপড়েনে ক্রমশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সম্পর্কের সমীকরণ। মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। আর কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের প্রয়াণের পরে তাঁর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসেন। ক্রমে বিজেপির দিকে ঢলে পড়ে মঞ্জুল শিবির। আর মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে নিজেদের পক্ষে রাখতে মমতাবালার উপরে তৃণমূলের নির্ভরতা আরও বাড়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে কেন সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালার নাম ছাপানো হয়েছে, এই সমীকরণ থেকেই তা স্পষ্ট। বলছেন শান্তনুর ঘনিষ্ঠরা।

নাতি শান্তনু (বাঁ দিকে) ঠাকুমা বীনাপাণির (মাঝে) বয়স নিয়ে যা বলছেন, তাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। —ফাইল চিত্র

বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের রাশ যে মমতাবালার হাতে থাকবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু সে অনুষ্ঠানে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে ঠাকুরবাড়ি সূত্রের খবর। শান্তনু ঠাকুর অবশ্য সে কথা স্বীকার করেননি। তিনি বললেন, ‘‘কোনও আমন্ত্রণপত্র এসেছে বলে শুনিনি, দেখিওনি। তবে এলেও কিছু যায় আসে না। ওই অনুষ্ঠানে আমি বা বাবা, কিছুতেই যেতাম না। ৯৮ বছর বয়সেই শতবর্ষ উদযাপনে যোগ দিতে পারতাম না।’’

মমতাবালা ঠাকুর অবশ্য শান্তনুর কথা উড়িয়েই দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের পরিচয়পত্রে বয়স বা জন্ম তারিখ যে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল থাকে, তা সকলেই জানেন। বড়মা নিজে আমাদের বলেছেন, তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালে। আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করব? নাকি, ভোটের পরিচয়পত্রকে বিশ্বাস করব?’’ বনগাঁর সাংসদ আরও বলেন, ‘‘ওঁরা যদি মনে করেন, এটা শতবর্ষ নয়, তা হলে পালন করবেন না। যখন ওঁদের মনে হবে শতবর্ষ হয়েছে, তখনই পালন করবেন। আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। এই অনুষ্ঠানটা নিয়ে ওঁদের কেন এত আপত্তি, আমি বুঝতে পারছি না।’’

বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement