—নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই কলকাতাকে লন্ডন বানানোর কথা বলে এসেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সেই স্বাদ পূরণের পথে হাঁটাও শুরু করেছেন নিজের মতো করে। টেমস নদীর ধার যেমন সুসজ্জিত, তেমনই স্ট্র্যান্ড রোড বরাবর গঙ্গার পাড় সাজিয়ে তুলেছেন অনেকটাই। ‘লন্ডন আই’-এর মতো ‘কলকাতা আই’ বসানোর উদ্যোগেও কমতি নেই। পরিবেশ আদালতের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে আপাতত সেই কাজ অবশ্য থমকে। তবু কলকাতাকে লন্ডনের তুল্য করার স্বপ্ন দেখতে তিনি নাছোড়।
এ বার আক্ষরিক অর্থেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেই লন্ডনে প্রথম পা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে সকালে যাত্রা করে দিল্লি, তার পরে সেখান থেকে লন্ডন। যখন নামলেন, লন্ডনে তখন প্রায় সন্ধে ৭টা, কলকাতায় মাঝরাত। হিথরো বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতীয় হাইকমিশনার রঞ্জন মাথাই।
কিছুটা বৃষ্টিভেজা লন্ডনে সপারিষদ মুখ্যমন্ত্রীর চার দিনের সফর শুরু হয়ে গেল। সঙ্গে এসেছেন রাজ্যের অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ আমলাদের একটি দল এবং একঝাঁক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে প্রায় একশো জনের দল। মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে রেখেছেন তাঁর এই সফর থেকে একশো শতাংশ সাফল্য আশা করার মতো অদূরদর্শী তিনি নন। বরং ৩০ শতাংশ হলেই তিনি আপাতত খুশি হবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরে আগামী কয়েক দিনে বিবিধ পর্যায়ের বৈঠক, আলোচনা এবং মউ সইয়ের কথা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দৃশ্যতই খুশি মমতা। তিনি মনে করছেন, অন্তত ২৩টি বিনিয়োগের প্রস্তাব তাঁর এই সফরে স্বাক্ষরিত হবে। কিছু শিল্প-বিনিয়োগ, কিছু আবার পারস্পরিক সহযোগিতামূলক। কাল সকাল থেকেই সেই সব আলোচনার সূচনা হবে। লন্ডনের সময় সন্ধে ৬টায় দু’দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সম্মেলনে যোগ দেবেন মমতা। নিজেও বক্তব্য রাখবেন। দীর্ঘ বিমানযাত্রার ফাঁকে সেই বক্তৃতার খসড়ায় চোখ বোলাতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘পাউন্ডের হিসেবে নয়, আমি যা বলার টাকার হিসেবেই বলব।’’ তবে খসড়া করে আনলেও বাণিজ্য প্রতিনিধি সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা দেবেন না মমতা।
হাওয়াই চপ্পলের বিলেত যাত্রা। কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিনেতা দেব। ছবি: সুমন বল্লভ।
এই সম্মেলনের আগে ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রুর আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্রাসাদে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত থাকবেন হাউস অব লর্ডসের স্পিকার এবং বেশ কয়েক জন সদস্য। বিলেতের রাজপ্রাসাদে কোনও ভারতীয় মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভ্যর্থনা পাওয়া বিরল। এ দিন ব্রিটেনের কর্মসংস্থানমন্ত্রী প্রীতি পটেলের সঙ্গেও বৈঠক হবে মুখ্যমন্ত্রীর।
আগামিকালের এই বৈঠক-সম্মেলন বাদ দিলে বাকি দিনগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব কর্মসূচিতে আর যা যা আছে তা কিছুটা সাংস্কৃতিক, কিছুটা সৌজন্যমূলক। বাংলার ‘সংস্কৃতি’ তুলে ধরতে এ দেশে নিজের রাজ্য থেকে কয়েক জন শিল্পীকে নিয়ে এসেছেন মমতা। তাঁরা গানবাজনা শোনাবেন। আছেন সাংসদ-অভিনেতা দেবও।
তখন বিমানে। রবিবার লন্ডনের পথে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী যখন লন্ডন পাড়ি দিলেন, তখন তাঁর রাজ্যের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। এই পরিস্থিতিতে মেয়রকে নিয়ে শহর ছাড়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। যদিও আজ বিমানবন্দরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর বলেন, ‘‘আকাশ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। খবর পেয়েছি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, কাকদ্বীপ ও ক্যানিং-সহ বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন। বেশি বাড়াবাড়ি হলে ফিরে আসব।’’
লন্ডনগামী বিমানেও সফরসঙ্গীদের বলেছেন, তাঁর মন পড়ে আছে ‘নিজের জায়গায়’। সেখানে কী হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না।