কার্শিয়াঙে মুখ্যমন্ত্রী, চাপ বাড়ছে গুরুঙ্গের

মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও ছিল কুয়াশা। হাড় হিম করা ঠান্ডা। শনিবার হঠাৎই বদলে গেল পাহাড়ের এই চেহারা। দুপুরে তাপমাত্রা এক লাফে ছ’ডিগ্রি বেড়ে গেল। ঝকঝকে আলোয় ভরে গেল কার্শিয়াং।

Advertisement

কিশোর সাহা

কার্শিয়াং শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৩
Share:

কার্শিয়াং যাওয়ার পথে মমতা। রোহিণীতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও ছিল কুয়াশা। হাড় হিম করা ঠান্ডা। শনিবার হঠাৎই বদলে গেল পাহাড়ের এই চেহারা। দুপুরে তাপমাত্রা এক লাফে ছ’ডিগ্রি বেড়ে গেল। ঝকঝকে আলোয় ভরে গেল কার্শিয়াং। আর বিকেলে সেই নরম আদুরে রোদের মধ্যে পাহাড়ে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী, উষ্ণ অভ্যর্থনা আর পথের ধার থেকে অজস্র দাবি এবং অনুরোধের হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে।

Advertisement

কার্শিয়াঙে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। মুখে অজস্র বলিরেখা। তৃণমূলের পতাকা আর উৎসুক মাথায় ভিড় করা রাস্তার দিকে তাকিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘এই লোকগুলো এত দিন মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষা করছিল। ওরা জানে, জলের সমস্যা হলেও মমতা, বোর্ড গড়তে হলেও মমতা। আর দিদি তো কখনও ওদের খালি হাতে ফেরাননি।’’

প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে পাহাড়ে ওঠার আগে, সুকনার কাছেও। যে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন মমতা। টুকটাক কথা বললেন। তার পর কার্শিয়াঙে ঢুকে ভিড়ের সঙ্গে মিশে হাঁটলেন সামান্য। কাউকে কাছে ডেকে নিলেন স্মারকলিপি। কারও আবার দুর্নীতি নিয়ে নালিশ পৌঁছল তাঁর কানে। বারবার আপ্ত সহায়ককে এই সব নিয়ে নির্দেশ দিলেন। এবং বললেন, ‘‘পাহাড়ে শান্তি আছে, থাকবে। উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। কোনও চিন্তা করার কিছু নেই।’’

Advertisement

কিন্তু চিন্তা কি নেই? ‘‘এক জনের তো চিন্তা আছেই,’’ বলছিলেন ওই ভিড়েরই এক মুখ— ‘‘চিন্তিত সেই লোকটার নাম বিমল গুরুঙ্গ!’’ কেন? অনেকেই বলছেন, সামনেই পুরভোট পাহাড়ে। এপ্রিলের শেষে বা মে-এর গোড়ায় করতেই হবে। তার আগে কার্শিয়াঙে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল। মমতার এই সফর, কার্শিয়াঙে দু’রাত কাটানোও তারই অঙ্গ বলে মনে করছেন তাঁরা। এমনিতেই বিধানসভা ভোটে ব্যবধান অনেক কমেছে। তার পরে সম্প্রতি কলেজ ভোটে একাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে টিএমসিপি। এগুলো কী ভাবে ভুলবেন গুরুঙ্গ?

এ দিন যে রোহিণী থেকে কার্শিয়াং প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ছিল ভিড়ে ঠাসা, মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি কার্শিয়াং স্টেশনে পৌঁছানোর পর অদূরের বিদ্যুৎ পর্ষদের বাংলোয় পৌঁছতে দশ মিনিটের উপর লেগে গেল, সে সব কথা গুরুঙ্গের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আর বাইরে বার হননি। তাঁর প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী তথা দলের দার্জিলিঙের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস রাত অবধি চষে বেড়িয়েছেন কার্শিয়াং। যা দেখে অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের লক্ষ্য যে পাহাড়ের আসন্ন পুরভোট, তা কারওর বুঝতে অসুবিধা হয়নি।

সন্ধ্যায় কার্শিয়াং পার্টি অফিসে মোর্চা থেকে আগতদের দলে যোগদান করানোর পরে অরূপবাবু বলেন, ‘‘রাশি রাশি অভিযোগ করছেন কার্শিয়াংবাসী। উন্নয়নের নামে টাকা নয়ছয়ের কত অভিযোগ যে শুনলাম! এসব চলবে না। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখে এখন এগোতে চাইছে কার্শিয়াং।’’ তৃণমূলের পাহাড়ের নেতা প্রদীপ প্রধান, বিন্নি শর্মা’রা রাস্তায় মানুষের ঢল দেখে উচ্ছ্বসিত। ওঁরা জানাচ্ছেন, আগামী পুরভোটে ২০টি আসনে ঘাসফুল ফোটার বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই আজ, রবিবারের সরকারির অনুষ্ঠানকে ঘিরে কার্শিয়াঙে পালের হাওয়া আরও জোরদার করতে চাইছেন পাহাড়ের ওই নেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement