মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
শিক্ষা দফতরের রিভিউ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত তুলোধোনা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। নবান্ন সভাঘরে সোমবার এই ‘অ্যাকাডেমিক রিভিউ’ বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা দফতরের সার্বিক পরিস্থিতিতে যে তিনি অত্যন্ত ‘অখুশি’,তা এ দিন কোনও রাখঢাক না করেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। নতুন একটি অ্যাপ বানিয়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ রাখবেন কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে— ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য, সব কলেজের অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা ডাক পেয়েছিলেন বৈঠকে। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা দফতরের সচিবরা। বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের কাজে আমি খুব অখুশি।’’ রাজ্য সরকারের শিক্ষা নীতির বা শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত নানা পদক্ষেপের রূপায়ণ কতটা হচ্ছে, সে সব দিকে শিক্ষামন্ত্রীর নজর আদৌ রয়েছে কি না, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গুরুতর সংশয় প্রকাশ করেন এ দিনের বৈঠকে।
বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের সঙ্গে এবং উপাচার্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সমস্যাগুলো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। মূলত উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকা থেকেই এ দিন নানা অভাব-অভিযোগের কথা উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। কোনও সমস্যার সমাধানের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দিয়ে দিয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে এবং জঙ্গলমহলের কলেজগুলির সমস্যার ক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সব নির্দেশ এ দিন বেশ স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, শিক্ষা দফতর মসৃণ ভাবে চালানোর প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে আর পুরোপুরি ভরসা তিনি করছেন না।
কলেজে কলেজে এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল দিল্লি পুলিশ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি এবং সাগর ব্লক থেকে কিছু অভিযোগ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কলেজগুলি থেকে বৈঠকে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিরা। রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে। তবে বিষয়টি আর বাড়তে দেননি মুখ্যমন্ত্রী। দেবশ্রী কাজ করেছেন, আরও করবেন— মুখ্যমন্ত্রী এমনই আশ্বাস দেন বলে শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর।
কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কত দূর এগোল, সাঁওতালি পাঠ্যক্রম তৈরির হাল কেমন, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরির কাজ শেষ হল কি না— এ ভাবেই একের পর এক বিষয় ধরে ধরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন। এ বার থেকে প্রতি ছ’মাস অন্তর এ ভাবেই রিভিউ বৈঠক ডেকে তিনি নিজে শিক্ষা দফতরের কাজ দেখভাল করবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর আরও একটি ঘোষণা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, শিক্ষা দফতরের ভার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে আর নিশ্চিন্তে ছেড়ে রাখতে চাইছেন না তিনি। বৈঠকে এ দিন তিনি জানান, শিক্ষা দফতরের জন্য একটি অ্যাপের ব্যবস্থা করা হবে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের (সিএমও) সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে তিনি নিজে সরাসরি কলেজগুলির খোঁজখবর রাখবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ‘শেষ মুহূর্তেও পিস্তল চালানোর চেষ্টা করেছিল রামুয়া’, স্ত্রীর বয়ান ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ
দফতরের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন বিভিন্ন স্তরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন না, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন বলে জানা গিয়েছে। দফতরের বিভিন্ন স্তরের কর্তাদেরও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি নিজে যদি গোটা রাজ্য ঘুরে ঘুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে পারেন, তা হলে শিক্ষা দফতরের জেলা স্তরের আধিকারিকরা কেন জেলায় জেলায় রিভিউ বৈঠক করে কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে পারবেন না? মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের বৈঠকে এমন প্রশ্ন তোলেন বলেও জানা গিয়েছে। ভর্তি নিয়ে কোনও কলেজে যেন দুর্নীতি বা গোলমালের অভিযোগ আর না ওঠে— রিভিউ বৈঠক থেকে সোমবার এই সতর্কবার্তাও শুনিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।