একশো দিনের কাজের মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যকে এড়িয়ে সরাসরি মজুরির টাকা চলে যাবে উপভোক্তার কাছে। মোদী সরকারের এই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের শুদ্ধতা রক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই সিদ্ধান্ত বদলের দাবি জানান মমতা।
এখানেই থামছেন না মমতা। তাঁর নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি বিজেপি-বিরোধী সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠাচ্ছে নবান্ন। উল্লেখযোগ্য ভাবে তালিকায় কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাও রয়েছেন।
নবান্নের ব্যাখ্যা, এই চিঠিকে হাতিয়ার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে বিজেপি-বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট করতে চাইছেন। এর আগে সন্দেহভাজন ৮ সিমি জঙ্গিকে গুলি করে মেরে ফেলা, দিল্লিতে রাহুল গাঁধী ও অরবিন্দ কেজরীবালকে আটকের ঘটনারও নিন্দা করেছেন মমতা। আবার, ‘এনডিটিভি-ইন্ডিয়া’র সম্প্রচার বন্ধ করা নিয়েও মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন তিনি। এ বার যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম না-মেনে মোদী সরকার যে ভাবে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে রাজ্যের অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে আওয়াজ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির পরেও এখনই ১০০ দিনের মজুরির টাকা দেওয়ার পদ্ধতি বদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের পঞ্চায়েত মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে আগে সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে হয়েছিল। মজুরির টাকা দ্রুত শ্রমিকদের হাতে পৌঁছনোর বিষয়ে রাজ্যও একমত হয়েছিল। এখন বিরোধিতা কী কারণে, বুঝতে পারছেন না তাঁরা।
নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, উপভোক্তাদের মজুরির টাকা এখনও ব্যাঙ্কেই পড়ে। তবে তা পাঠায় রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের টাকা প্রথমে আসে অর্থ দফতরে। সেখান থেকে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। কিন্তু দু’হাত ঘুরে মজুরি পেতে শ্রমিকদের দেরি হয়— এই যুক্তিতেই সরাসরি টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আর তাতেই তীব্র প্রতিবাদ রাজ্যের।
গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রক রাজ্যকে এড়িয়ে সরাসরি উপভোক্তাদের টাকা পাঠাচ্ছে। এই ব্যবস্থা সাংবিধানিক কাঠামোর পরিপন্থী, রাজ্যকে অবিশ্বাস করার সামিল। পাশাপাশি, মজবুত আর্থিক ব্যবস্থাপনারও উল্টো পথে হাঁটার মতো ঘটনা, যা মেনে নেওয়া যায় না’। এর পরেই সরাসরি ১০০ দিনের কাজের প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখেছেন, ‘গ্রামীণ কর্মসংস্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রকল্প। এর সঙ্গে গরিব মানুষের কাজ পাওয়ার বিষয়টি জড়িত। রাজ্যের সাহায্য ছাড়া এই প্রকল্প চলতে পারে না।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যও এই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পৌঁছলে, রাজ্যের টাকাতেই মজুরি মেটাতে হয়। এ বছর ২৫ অক্টোবরই মজুরি দিতে ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য। কারণ, কেন্দ্র টাকা পাঠায়নি। এখন কেন্দ্র যা চাইছে, তা শুধু রাজ্য সরকার নয়, বিধানসভারও অবমাননা।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর অনুরোধ— ‘এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত বদলের নির্দেশ দিন। তা হলেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের শুদ্ধতা বজায় থাকবে’।
মুখ্যমন্ত্রী পরে অভিযোগ করেন, ‘‘এই সরকার রাজ্যের প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। সরাসরি মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এক জন মুখ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর অধীনস্থ রাজ্যের অফিসার। মুখ্যমন্ত্রীকে এড়িয়ে এ ধরনের হস্তক্ষেপ আগে কখনও হয়নি। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। এবং তা শুরু হল!’’
কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, ‘‘রাজ্যকে ইতিমধ্যেই ৩৬০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও টাকা দেওয়া হবে। কেন্দ্র যখন টাকা দিচ্ছে তখন সেই টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না সেটা দেখে নেওয়াটাও তাদের দায়িত্ব। রাজ্যের অধিকার খর্ব করার প্রশ্নই নেই।’’