পুরভোটের আগে শেষ রবিবার জমজমাট প্রচারে বেশ খানিকটা জায়গা কেড়ে নিল সন্ত্রাসের অভিযোগ। কলকাতা পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেলেঘাটা এলাকায় আক্রান্ত হলেন সিপিএম কর্মী এবং প্রার্থী স্বয়ং। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচার চলাকালীন দলের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে দাবি। বেশ কিছু অভিযোগ মিলেছে জেলা থেকেও। প্রতিটি ঘটনাতেই তির শাসক তৃণমূলের দিকে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ সবে আমল দেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘(বিরোধীরা) পিঠে বেঁধেছে কুলো আর কানে দিয়েছে তুলো। খালি সন্ত্রাস আর গোলমাল দেখছে! কোথাও কোনও সন্ত্রাস, গোলমাল নেই।’’
অথচ বেলেঘাটায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারসভার কয়েক ঘণ্টা আগেই সিপিএম কর্মীদের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে শাসক দলের দাপট দেখাতে ওই আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ঝুমা দাসের সমর্থনে মিছিল শেষ হওয়ার পর দলের কর্মী দিবস দে-কে মারধর করা হয়। ঝুমাদেবী দাবি করেন, ‘‘ওরা আমাকেও ধাক্কা মারে।’’ স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী অলকানন্দা দাস অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘মিথ্যা কথা। আমার নামে দেওয়াল লিখনের উপর বাম প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখা হয়। তার প্রতিবাদ করতে গেলে দু’দলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’’ দু’পক্ষই বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ করেছে।
এর আগে শনিবার গভীর রাতে কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ দায়ের হয় আনন্দপুর থানায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ওয়ার্ডের অন্তর্গত পূর্ব পঞ্চান্নগ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ করে জনা কয়েক দুষ্কৃতী। ওই কর্মীর স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ওই কর্মীর শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। চুরি যায় একটি সোনার চেন। এ দিন বিকেলে আক্রান্তের বাড়িতে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সিদ্ধার্থনাথ বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে। এ রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে!’’ এই ঘটনার প্রতিকার পেতে দলের লিগাল সেল আদালতের দ্বারস্থ হবে বলেও সিদ্ধার্থনাথ জানান। রাহুলবাবুর সংযোজন, ‘‘এই ঘটনার পরে পুলিশ বলেছে, এফআইআর নেব। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে নেব না।’’ ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিজেপির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
এখানেই শেষ নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে এন্টালির মতিঝিল বস্তি এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থী ফতেমা অঞ্জুমের প্রচারের সময় দলের কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দীপালি দাসের দাবি, ‘‘এ সব মিথ্যা অভিযোগ। হালে পানি না পাওয়ায় ওরা উল্টো-পাল্টা মন্তব্য করছে।’’ গঙ্গারামপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের কর্মসূচিতে এবং শিলিগুড়ির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পুরভোটের মুখে শাসক দলের এই সব সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিন দলের রাজ্য দফতর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছ বিজেপি। রাহুল, সিদ্ধার্থনাথ, বাবুল, অহলুওয়ালিয়া, অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় ওই মিছিলে ছিলেন। মিছিলের শেষে সন্ত্রাসের প্রশ্নে ব্রিটিশ শাসকের সঙ্গে তৃণমূলের তুলনা করেন সিদ্ধার্থনাথ। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলে মানুষ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। আজ আবার আমরা রাস্তায় নেমেছি তৃণমূলের রাজত্ব থেকে মুক্তি চাইতে।’’ অহলুওয়ালিয়ার প্রশ্ন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদি নিজের সততা এবং উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে এতই গর্ব, তা হলে সন্ত্রাসের প্রয়োজন হচ্ছে কেন?’’ দলীয় কর্মীদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দেন বাবুল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা সন্ত্রাস করছে, তারা ভীতু। লড়াই করলে তারা সাপের গর্তে ঢুকে যাবে। কারণ তারা আসলে সাপ।’’
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করছেন, তাঁর দলের লোকেরা ‘দুষ্টুমি’ করলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের ধরে। দলের নাম ভাঙিয়ে তিনি কাউকে কোনও অন্যায় করতে দেন না। বেলেঘাটার সভায় এই প্রসঙ্গে শম্ভুনাথ কাউ এবং মুন্নার গ্রেফতার হওয়ার উদাহরণ দেন মমতা। সিপিএমের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যারা দিনের পর দিন আমাদের বেলেঘাটায় ঢুকতে দেয়নি, কলকাতায় ভোট করতে দেয়নি, বহুতলে তালা লাগিয়ে দিত, তাদের মুখে রামনাম শুনব!’’