এনরেগা

একশো দিনের মজুরির টাকা সরাসরি, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মমতা

এ বার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরির টাকা সরাসরি জমা পড়বে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কেন্দ্রের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তাঁর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

এ বার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরির টাকা সরাসরি জমা পড়বে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কেন্দ্রের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তাঁর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত। একই সঙ্গে রাজ্যের প্রতি অবিশ্বাস ও তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ।’’

Advertisement

জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প বা ‘এনরেগা’ পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে জন্য প্রতিটি পরিবারকে বছরে কমপক্ষে ১০০ দিন কাজ নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। চালু হয়েছে বছর দশেক আগে।

নবান্নের কর্তারা জানান, এখন এই প্রকল্পে কেন্দ্রের অনুদান জমা পড়ে রাজ্যের অর্থ দফতরে। তার পর পঞ্চায়েত দফতরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তা বিলি করা হয় শ্রমিকদের। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত— এ বার থেকে আর ওই টাকা সরাসরি চলে যাবে শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তেই আপত্তি নবান্নের।

Advertisement

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব হয়েছেন মমতা। দিল্লির নতুন সিদ্ধান্ত জেনে এ দিন নবান্নে বৈঠক ডাকেন তিনি। মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা সেখানে হাজির ছিলেন। তার পরেই রাজ্যের ওই মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী।

তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে চিঠি পাঠাবে দিল্লিতে। অন্য রাজ্য যাতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে না-নেয়, তার জন্য তাদেরও আর্জি জানানো হবে। নবান্নের অভিযোগ, এর আগে প্রশিক্ষণের নাম করে রাজ্যের ট্রেজারিতে নিজেদের অফিসার বসাতে চেয়েছিল বিজেপি সরকার। নবান্নের আপত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে কেন্দ্র। আবার নতুন করে অধিকার হরণ করতে চাইছে তারা।

পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, ১০০ দিনের প্রকল্পে এখন কেন্দ্র ৭৫% অর্থ দেয়। রাজ্য বাকিটা। নিয়ম হল, এই প্রকল্পে যাঁরা কাজ করছেন, সেই ‘মাস্টার রোল’ বা নামের তালিকায় পঞ্চায়েত স্তরে প্রথমে এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট, পরে সংশ্লিষ্ট গ্রাম প্রধান সই করেন। সেই তালিকা ধরেই শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্র বলছে, মাস্টার রোলে পঞ্চায়েত প্রধানের সই দরকার নেই। অর্থাৎ, রাজনীতির হস্তক্ষেপ বন্ধ করা তাদের লক্ষ্য।’’ পার্থবাবু ও অমিতবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যের বাজেট বিধানসভায় পাশ হয়। ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা সরাসরি জমা পড়লে তা বিধানসভাকে এড়ানোর নামান্তর।’’ প্রশ্ন করা হয়, এই প্রকল্পে কেন্দ্র কত অনুদান দেয়। উত্তর এড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘এগুলো নেটেই মেলে।’’

নবান্নে সূত্রে খবর, চলতি অর্থবর্ষের গোড়ায় রাজ্য পরিকল্পনা করেছিল, এই প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। কিন্তু কেন্দ্র নয়া নির্দেশ জারি করায় সেই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সূত্রের খবর, ২৫টি দফতরের মাধ্যমে এই প্রকল্পের টাকা খরচ হয়। কোন দফতর কত খরচ করে, মন্ত্রীদের ১৫ দিনের মধ্যে হিসেব দিতে বলেছেন মমতা। সেই তথ্য পেয়ে পরের পদক্ষেপ করবে নবান্ন।

বিরোধীরা এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর স্ববিরোধিতা দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিরোধী হিসেবে মমতার দাবি ছিল, ‘পিএম টু ডিএম’। অর্থাৎ, কেন্দ্র অনুদান ও ভর্তুকির টাকা সরাসরি জেলাশাসকের তহবিলে জমা দিক। বিরোধীরা বলছেন, কেন্দ্র কার্যত মমতার সেই দাবির পথেই হাঁটছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement