বর্ষার তুঘলকি মেজাজ এ বার চাষির হাসি কেড়ে নিয়েছে। কোথাও বৃষ্টি স্বাভাবিক, কোথাও কোথাও বর্ষণে ঘাটতি। সামঞ্জস্য নেই বর্ষার দাক্ষিণ্যে। এই অবস্থায় কম বৃষ্টির দরুন রাজ্যের কোথাও খরার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না, অবিলম্বে তা সমীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রের খবর, সমীক্ষায় যদি দেখা যায়, কোথাও স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে অথবা আমন ধান রোয়ার কাজ স্বাভাবিকের তুলনায় এখনও ৫০ শতাংশ কম, সে-ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে খরাকবলিত বলে ঘোষণা করা হবে। রাজ্যে চলতি মরসুমে বৃষ্টির খামখেয়ালিপনার পরিপ্রেক্ষিতে চাষ-আবাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার নবান্নে কৃষি দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
এ দিনই রাজ্যের সব জেলাশাসকের কাছে নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছে কৃষি দফতর। যে-সব জায়গায় ব্যাপক অনাবৃষ্টির খবর এসেছে, মৌজা ধরে ধরে সেখানে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ও ধানের চারা রোয়ার খতিয়ান পাঠাতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। মাঠে নেমে সমীক্ষার কাজটি চালাবেন ব্লক কৃষি আধিকারিকদের অধীন কর্মীরা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোনও এলাকায় খরা ঘোষণা করা না-করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। কোথাও পানীয় জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে কি না, জেলাশাসকদের রিপোর্টে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।
খরা ঘোষণা করা হলে এলাকার বাসিন্দারা কী সুবিধা পাবেন?
এক সরকারি মুখপাত্র জানান, সরকার রাজ্যের কোনও এলাকাকে খরাকবলিত বলে ঘোষণা করলে সেখানকার কৃষকেরা বিনামূল্যে মিনিকিট থেকে শুরু করে নানা ধরনের সাহায্য পেতে পারেন। পানীয় জলের অভাব দেখা দিলে তা সরবরাহ করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণে ঘাটতি এখন খুব বেশি নয়। আবহবিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী ঘাটতি ২০ শতাংশ। তবে এটা স্বাভাবিক বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কয়েকটি জেলায় গত দু’মাসে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ট কম। আর এটাই রাজ্য সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষত, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরে এ-পর্যন্ত বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ট কম। দক্ষিণবঙ্গে এ বার বর্ষা কিছুটা সক্রিয় হয়েছে মরসুমের মাঝামাঝি। কিন্তু ছন্দছাড়া বর্ষণে স্বস্তি নেই চাষিদের। কোথাও ভাল বৃষ্টি চলছে। কোথাও আবার মাঠঘাট ফুটিফাটা। বর্ষার খামখেয়ালেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। কৃষিকর্তারা জানান, সরকারি হিসেবে আমন ধান রোয়ার সময়সীমা ১৫ অগস্ট। তবে অগস্টের শেষ পর্যন্ত রোয়া চলে। কৃষি দফতর এ বার ৪২ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছে। গত বছরের তুলনায় ৭০ হাজার হেক্টর বেশি। কিন্তু ১ অগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৪৩.৬% জমিতে ধান রোয়া হয়েছে।
কৃষি দফতরের কর্তারা অবশ্য মনে করছেন, বৃষ্টির ঘাটতি পূরণের সময় এখনও রয়েছে। রাজ্যের সামগ্রিক বৃষ্টিপাতের অবস্থা নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি প্রথম পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনায় বসবে কৃষি দফতর। কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ৭ সেপ্টেম্বরের পরেও খারাপ অবস্থা চললে বিকল্প চাষের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা হবে।