মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
বিভিন্ন ভাবে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও রাজ্যের অন্যতম বড় ও চালু প্রকল্প ‘জলস্বপ্ন’-এ টাকার ঘাটতি রাখতে চাইছে না নবান্ন। নির্ধারিত পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদে নতুন সরকার গঠন করেই প্রকল্পটিকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত মে থেকে অগস্ট পর্যন্ত ওই প্রকল্পের গতি বেড়েছে প্রায় ছ’গুণ। কেন্দ্রের জল-জীবন মিশনের নিরিখে জলস্বপ্নে বিশেষ নজর দেওয়ার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও আছে রাজ্যের।
তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার যে সামাজিক খাতেই বেশি মাত্রায় খরচ করবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী নতুন প্রকল্প বা পরিকল্পনায় এখন কার্যত রাশ টানছে সরকার। প্রতিটি দফতরের খরচেও ‘লাগাম’ পরানো হয়েছে। তবে সেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে জলস্বপ্ন প্রকল্পকে সার্থক করে তোলার প্রয়াস চলছে। সরকারি রিপোর্ট বলছে, মে (ওই মাসেই শপথ নিয়েছিল নতুন সরকার)-তে ঘরে ঘরে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ৪১ হাজার। জুনে তা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয় প্রায় ৮৩ হাজার। জুলাই এবং অগস্টে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে হয় যথাক্রমে প্রায় ১.৬৩ লক্ষ এবং ২.৩৮ লক্ষ। উল্লিখিত প্রথম দু’মাসে গোটা দেশের মধ্যে বাংলার অবস্থান ষষ্ঠ হলেও জুলাই এবং অগস্টে তা হয় যথাক্রমে পঞ্চম এবং প্রথম। গত বছর থেকে এ-পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় ২১ লক্ষ ৬০ হাজার জল-সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বক্তব্য, জল প্রকল্পের ক্ষেত্রে টাকার সমস্যা নেই। দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, “প্রতিটি পরিবারে যাতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিয়মিত তদারকি চালাচ্ছেন।”
বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে ২০১৯ সালে কেন্দ্রের জল-জীবন মিশন শুরু হয়েছিল। আর বাংলায় ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প শুরু হয় গত বছর। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রায় দু’কোটি পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। গত বছর ৫৫ লক্ষ পরিবারে জল-সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৫ লক্ষ পরিবার সেই জল পেয়েছে। অন্য দিকে, প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র তাদের অংশিদারির অর্থ বরাদ্দ করে চলেছে নিয়মিত। ফলে পশ্চিমবঙ্গ নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না-পারলে তা বিরোধী শিবিরের প্রচারের কেন্দ্রে চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র দিয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের ভাগেও রয়েছে সমপরিমাণ অর্থ।