গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে চিঠি লিখে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি অমর্ত্যের শান্তিনিকেতনের বাড়ি নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যম থেকে তা জানতে পেরে তিনি ‘বিস্মিত এবং আহত’। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে অমর্ত্যকে মমতা লিখেছেন, ‘বিশ্বভারতীর কিছু নব্য হানাদার সম্প্রতি আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে’। সেই সঙ্গেই মমতার ঘোষণা, ‘এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আপনার লড়াইয়ে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে’।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে লেখা চিঠিতে তাঁকে ‘সম্মাননীয় অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করেছেন মমতা। চিঠির শেষে প্রণামও জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে এ দেশের আধিপত্যবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাকে আপনার বোন এবং বন্ধু হিসেবে গণ্য করুন’। অমর্ত্য এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের দীর্ঘদিনের নিবিড় যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে মমতা লিখেছেন, ‘আপনার মাতামহ পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের বাসিন্দাদের একজন। আপনার বাবা শিক্ষাবিদ এবং প্রশাসক আশুতোষ সেন আট দশক আগে প্রতীচী নির্মাণ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি এবং বন্ধনের সঙ্গে আপনাদের পরিবার নিবিড় ভাবে আবদ্ধ’।
দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রের শাসকদলের নেতাদের একাংশ অমর্ত্য সম্পর্কে প্রকাশ্যে নানা বিতর্কিত এবং তির্যক মন্তব্য করে চলেছেন। এমনকী, শান্তিনিকেতনে তাঁর বাড়ি ‘প্রতীচী’ সংলগ্ন জমির একাংশ বিশ্বভারতীর বলেও সম্প্রতি শাসকশিবির-ঘনিষ্ঠ একটি মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়। ঘটনাচক্রে, ওই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বিতর্কটি ‘অন্য মাত্রা’ পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। অমর্ত্যকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি অসম্মান করছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অমর্ত্যবাবুর অমর্যাদা আমরা হতে দেব না।’’ প্রতীচীর জমি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আপনারা কি বিশ্বাস করেন, অমর্ত্য সেনের এমন দিনও আসবে, যে তাঁকে শান্তিনিকেতনে জমি দখল করতে হবে! অমর্ত্য সেন আদর্শগত ভাবে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বলে তাঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে, এটা বাংলার মানুষ সহ্য করবে না। আমি বাংলার হয়ে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা করবেন অমর্ত্যদা। আপনাদের মতো মানুষকেও এরা সম্মান দিতে জানেন না। আমি দুঃখিত।’’
আরও পড়ুন: পিসির বাগানের ফুল শুকিয়েছে, মালদহে বিতর্কিত মন্তব্য সায়ন্তনের
পাশাপাশিই, বিশ্বভারতীয় শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার কথা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পৌষমেলা বন্ধের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘শান্তি থাকবে। পড়াশোনার পরিবেশ থাকবে। পৌষমেলাও থাকবে।’’ মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘পৌষমেলা কেন বন্ধ হল?’’ প্রসঙ্গত, বুধবার বাংলা ৭ পৌষ থেকে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা ছাড়া ‘পৌষ উৎসব’ শুরু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এ বার পৌষমেলা হচ্ছে না। মমতা অবশ্য নীতিগত ভাবে মেলা বন্ধের বিরোধী। ঘটনাচক্রে, বুধবারই তিনি সঙ্গীতমেলার উদ্বোধন করেছেন।