মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পুণ্যার্থীদের যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আগামী ৩ জানুয়ারি সাগরদ্বীপে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। হাতে আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি। জোরকদমে চলছে মেলার প্রস্তুতি।
গত বুধবার নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মেলা সংক্রান্ত বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সাগরদ্বীপে পৌঁছানোর আগেই গত বৃহস্পতিবার মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং থেকে শুরু করে গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত সেচ দফতরের হাতে থাকা সমস্ত কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সাগরদ্বীপ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। এ ছাড়া, বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা একাধিক বার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেছেন। মেলার পাশাপাশি কপিলমুনি মন্দির চত্বরও ঘুরে দেখেছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসন সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। শনিবার গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিকও। জেলা প্রশাসনের দাবি, এ বছর প্রায় ৪০ লক্ষ পুণ্যার্থী মেলায় আসতে পারেন।
পরিবেশবান্ধব মেলা করার লক্ষ্যে আবারও প্লাস্টিক বর্জনের উপরে জোর দিয়েছে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। বৃহস্পতিবারই এই কর্মসূচির সূচনা করা হয়। একই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। মেলা চলাকালীন সব রকম প্লাস্টিকের ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রশাসনের আধিকারিকেরা গঙ্গাসাগরে হেলিপ্যাড ময়দান থেকে গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ড-সহ সৈকতের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করবেন। তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য এ বারে ‘বাফার জ়োন’ তৈরি করা হচ্ছে। সেটাও পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন আধিকারিকেরা। মন্দিরে নতুন রঙের পোচ পড়েছে। একইসঙ্গে কচুবেড়িয়া বাস স্ট্যান্ড এবং গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ড থেকে মেলা চত্বরে ১ থেকে ৫ নম্বর রাস্তা আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ বছর তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে করা হয়েছে ৬ নম্বর রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে তীর্থযাত্রীরা অনায়াসেই মকরস্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতালও তৈরি করে রাখা হয়েছে বলে খবর।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে গঙ্গাসাগর মেলার কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। ২৪ ঘণ্টা বাস এবং লঞ্চ পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার ২২৫০টি সরকারি বাস চালাবে। পূর্ব রেলের তরফে ৬৬টি অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্য দিকে, মেলা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে দায়িত্বে থাকবেন মন্ত্রী পুলক রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, প্রদীপ মজুমদার ও গঙ্গাসাগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। সেই উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে রাজ্যে গঙ্গাসাগর মেলার আসর বসছে। মকর সংক্রান্তিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। ওই দিন ১২টা ১৩ মিনিট থেকে ১৬ জানুয়ারি ৯টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত পুণ্যস্নানের যোগ। তাই রাজ্য প্রশাসন এ বারের মেলা আয়োজনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। বাংলার রাজনীতির কারবারীরা অবশ্য মনে করছেন, রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নিজেদের হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে শান দেওয়ার কাজ করবে বিজেপি। তাই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনে যাতে কোনও রকম ত্রুটি না হয়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকছে রাজ্যের শাসক দল। সাগরমেলার আয়োজনের প্রত্যেকটি বিষয়ে নিজে নজর রাখছেন মমতা।