প্রশান্ত কিশোর।—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল দলটাকেই নব কলেবর দিতে তাঁর উদ্যোগ প্রকট। এ বার রেড রোডে ১৫ অগস্টের অনুষ্ঠানেও কি সেই প্রশান্ত কিশোরের ছায়া! অন্তত নবান্নে কানাঘুষো তেমনই।
স্বাধীনতা দিবসের যে-সূচি তৈরি হয়েছে, তা দেখে নবান্নের একাংশের অভিমত এমনটাই। কারণ, শুধু সরকারের প্রকল্পের প্রচারেই থেমে থাকছে না স্বাধীনতা দিবসের ট্যাবলো। সেই সঙ্গে এ বারেই প্রথম সামাজিক সচেতনতা তৈরির জন্য তিনটি বিশেষ ট্যাবলো থাকছে। অনেকের মতে, বছরভর রাজনীতির নাগপাশে আটকে না-থেকে পরিবেশ, বিদ্যুৎ, জল সংরক্ষণের মতো সামাজিক বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ প্রশান্তই দিয়ে থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সে-কথা মাথায় রেখেই লোকসভা ভোটের পরে কলকাতায় প্রথম কর্মসূচিতে ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পকে সামনে রেখে পদযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১ অগস্ট পরিবেশ বাঁচাতে ফের হাঁটবেন তিনি। একই ভাবে বিদ্যুৎ বাঁচাতে রাজ্যবাসীর কাছে ইতিমধ্যে আবেদন করেছে সরকার। আসলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জনসংযোগকেই প্রাধান্য দিচ্ছে প্রশান্তের সংস্থা।
যদিও তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের এক শীর্ষ কর্থা বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হয়। এর সঙ্গে ‘বেসরকারি’ কোনও ব্যক্তির যোগ নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে পরিকল্পনা ও রূপায়ণের দায়িত্বে আছি আমরাই।’’
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এ বার যে-আটটি ট্যাবলো থাকছে, তার প্রথমটি জল বাঁচানোর বার্তাবাহী। তার পরেই পরপর আসবে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও পরিবেশ-সবুজ বাঁচানোর বার্তাবাহী ট্যাবলো। অতঃপর থাকবে কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী এবং সবুজসাথী (সাইকেল বিলি সংক্রান্ত) ট্যাবলো। তার পরে বাংলার ফুটবল এবং তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের তৈরি ‘বাংলা মোদের গর্ব’ থিমের উপরে তৈরি ট্যাবলো থাকবে। ‘বাংলা-বাঙালি’ থিমের উপরে এ বারেই প্রথম ট্যাবলো তৈরি হল। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পরে সরকার ও কলকাতা পুরসভা এই থিমের উপরে রাজ্য জুড়ে হোর্ডিংও দিয়েছিল। এর মধ্যে অনেকেই বিজেপির ‘হিন্দু-হিন্দি’ আগ্রাসনের পাল্টা রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
গত বার প্রথম ট্যাবলো ছিল সবুজশ্রীর। এর পরে এসেছিল কন্যাশ্রী, রূপশ্রী (সাবালিকা বিয়েতে সহায়তা), খাদ্যসাথী, সবুজসাথীর ট্যাবলো। বিশেষ বার্তা নিয়ে ছিল তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের দেশের ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ বজায় রাখার ট্যাবলো। নবান্নের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৮-র অগস্ট থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখার পরিকল্পনা করছিলেন। সেই অনুযায়ী ট্যাবলোও তৈরি হয়েছিল। ভোটে ফলের পরে এখন তাই ‘বাংলা মোদের গর্ব’ ট্যাবলো করা হচ্ছে।
আরও লক্ষ করার বিষয় হল, গত বছর স্কুলপডুয়াদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ডাক পড়েছিল কলকাতার ন’টি স্কুলের। সঙ্গে এসেছিল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, পুরুলিয়া, দার্জিলিং, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল। এ বার কলকাতার পাঁচটি স্কুলের সঙ্গে জলপাইগুড়ি, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুলকে ডাকা হয়েছে। নবান্নের প্রশাসনিক মহলে অনেকের প্রশ্ন, জেলা-ভিত্তিক স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি সাম্প্রতিক রাজনীতির প্রভাব পড়েছে? কারণ, উত্তরবঙ্গের অনেক জেলা বাদ পড়েছে। তেমনই বাঁকুড়া ও জলপাইগুড়ি ছাড়া এ বছর সেই সব জেলার স্কুলই রেড রোডে আসছে, যেখানে তৃণমূল জিতেছে। যদিও তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব জেলাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সুযোগ দিতে হয়। তাই আগের বারের অনেককে ডাকা হয়নি। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।’’ ওই কর্তার দাবি, ‘‘গত বার দার্জিলিঙের লোকনৃত্য, পুরুলিয়া ছৌ ও সুন্দরবনের বনবিবির পালা হয়েছিল। এ বারেও ছৌ ও পাহাড়িয়া লোকনৃত্য থাকছে। ফলে রাজনীতি নেই। বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।’’