মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক প্রস্তুতির পাঠ দিতে আজ শুক্রবার দলীয় বৈঠকে বসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দুর্নীতি নিয়ে দল, সরকার এবং নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে তিনি ফের এক বার সংগঠনের রাশ হাতে নেওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারেন, এমনটাও ধারণা করা হচ্ছে দলের একাংশের তরফে।
পঞ্চায়েত স্তরে আবাস ও ১০০ দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গরু ও কয়লা পাচার এবং নিয়োগ মামলা। এই দুই ঘটনায় দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জেলে। জেলে রয়েছেন দলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং দুই যুব নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, এই মামলায় দলের যোগ ক্রমেই গভীর হচ্ছে। সেই সঙ্গে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন আদালতের নির্দেশে তাঁদের চাকরি চলে যাওয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা বড় রকমের চাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শাসকদলের কাছে। এই অবস্থায় দলের একাংশ এখনও মনে করেন, মমতাই দলের কাছে ‘ত্রাতা’ হয়ে উঠতে পারেন। এবং সেই লক্ষ্যেই এই বৈঠকে নিজের ভাবনার কথা জানাতে পারেন তিনি।
সম্প্রতি সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের হারে এ সবের ছায়াও দেখছেন অনেকে। প্রাথমিক ভাবে মমতা নিজেও সংখ্যালঘু ভোট সরে যাওয়ায় দলের অন্দরে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। বছর দুই আগে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জেতা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘিই হাতছাড়া হওয়ার পরে দলের তরফে যে পর্যালোচনা করা হয়েছে, এই বৈঠকে তা সামনে রেখেও কী করণীয় ব্যাখ্যা করতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। ওই রিপোর্টে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সকলের কাছে ঠিকমতো না পৌঁছনো, প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার মতো কিছু কারণ থাকলেও নজরে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টিও। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটে দলের রণকৌশল কী হবে, তা নিয়ে নানা স্তরে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ দলীয় বৈঠকে তারই দিকনির্দেশ দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী।
এ দিকে, চোপড়ার ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী এই বৈঠকে আসছেন না। সম্প্রতি একটি খুনের ঘটনা ও তার জেরে চরমে ওঠা এই অঞ্চলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ক্ষুব্ধ করিম জানিয়েছেন, দলের অন্দরে কথা বলার সুযোগ নেই বলেই এই বৈঠকে তিনি থাকবেন না।
শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ধারণা, মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। তার আগে দলের সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি ও যুব, মহিলা, শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সংগঠনের জেলা সভাপতিদের এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। মমতা ছাড়াও বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কিছু বিষয় নিয়ে বক্তৃতা করার কথা রয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। তবে দীর্ঘদিন পরে জেলা স্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দলনেত্রীর এই বৈঠককে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।