জেলার কয়েকটি জায়গায় তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। শনিবার দুপুরে বেলগুমা পুলিশ লাইন ও বলরামপুরে মহড়া দিল চপার। ছিলেন রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিনীত গোয়েল। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুরে ‘ধাক্কা’। তারপরেই সেখানকার দুই বিজেপি কর্মীর খুনের অভিযোগকে ঘিরে তৃণমূলকে তির করে সুর চড়ায় বিজেপি। তারপর থেকে মানুষের আস্থা ফেরাতে বারবার বলরামপুরে সভা করেছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। এমনকি, দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলরামপুরে গিয়ে সভা করেন। এ বার জেলা সফরে এসে সেই বলরামপুরে রাজনৈতিক সভা করতে আসার কথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলনেত্রী বুধবার বলরামপুর কলেজ ময়দানে সভা করবেন।’’
দলীয় সভার জন্য বলরামপুরকে নির্বাচন করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুজয়বাবু অভিযোগ করেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বলরামপুরে বিজেপির বহিরাগতেরা ঢুকে ভোটের আগে গণ্ডগোল পাকিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছিল। দলনেত্রী শুধু বলরামপুরের মানুষজনকেই নয়, সারা জঙ্গলমহলের মানুষের কাছেও বার্তা দেবেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবার দুপুরেই পুরুলিয়ায় নামার কথা। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। তারপর ব্যাটারি গ্রাউন্ডে হিন্দিভাষিদের সভায় যোগ দেবেন।’’ তিনি জানান, বুধবার বলরামপুরে রাজনৈতিক জনসভা করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সে দিনই বাঁকুড়ার শালতোড়ায় প্রশাসনিক সভা রয়েছে তাঁরা। সেখানেই দুই জেলার বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার কথা।
তবে বলরামপুরেই যে তৃণমূলের এখন নজর বেশি, তা বলছেন দলের অনেক নেতাই। বলরামপুরে নিজের গড়ে পরাজিত হন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতই বিজেপি দখল করে। সৃষ্টিধর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার আচরণ নিয়ে মানুষের ক্ষোভেই এই পরাজয় বলে দাবি করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বারবার সভায় সেই ‘ভুলের’ কথা স্বীকার করে উন্নয়নকে দেখিয়ে মানুষকে পাশে টানার চেষ্টা চালান দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে বলরামপুরে বিজেপির দুই কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেয়। পঞ্চায়েতের ফল প্রকাশের পরে ৩০ মে সুপুরডি গ্রামের বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো ও ২ জুন ডাভা গ্রামের বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বিজেপি নেতৃত্ব খুনের অভিযোগ করে তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলে। প্রতিবাদ জানাতে পুরুলিয়ায় সভা করেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
দু’টি ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি সৃষ্টিধরের বড় ছেলে সন্দীপ মাহাতো-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। হয়। তবু, জোড়া-মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে যান নিহতদের পরিজনেরা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অগস্টের শেষের দিকে জয়পুর ব্লকের ঘাগরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে গোলমালে গুলিতে মারা যান দুই বিজেপি কর্মী। সম্প্রতি পুঞ্চার পাড়ুই গ্রামে আততায়ীর গুলিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী পিন্টু সিংহ। সেই খুনের ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলে তৃণমূল।
আদিবাসীরা ছাড়াও বলরামপুরে অল্পস্বল্প শবররা রয়েছেন। পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কী কী প্রকল্প চালু করেছে, মমতা তা তুলে ধরলে, সংগঠনের সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা।
তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, মমতা বলরামপুরে শেষ জনসভা করেছিলেন, রাজ্যে পালাবদলের ঠিক পরেই, ২০১১-র নভেম্বরে। সে বারও বলরামপুরের কলেজ ময়দানেই সভা হয়। এ বারও সেই জায়গাই তাঁর জন্য বাছা হয়েছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে দলের ধাক্কার পরে ঝালদা ২ ব্লকে বৃদ্ধার ‘অনাহারে’ মৃত্যু, ঝাড়গ্রামে শবরদের মৃত্যু থেকে শুরু করে অনুন্নয়ন নিয়ে নানা কথা উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর না এসে উপায় কি!’’