অমর্ত্য সেনের বাড়িতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।
জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠেছে। তার মধ্যেই শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক সেনের ‘প্রতীচী’র ঠিকানায় গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে নিয়ে গেলেন বিশ্বভারতীর জমির নথিপত্রও। অধ্যাপক সেনের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় সেই সব নথি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘জমির নথি সঙ্গে নিয়ে এসেছি। কী করবে করুক!’’ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তাও ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বীরভূম সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এই সফরে এসে সোনাঝুরির হাট ঘুরে মমতার প্রথম গন্তব্য ছিল সেন পরিবারের ‘প্রতীচী’। সেখানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি বিশ্বভারতীর জমির নথি সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিক ধরে সহ্য করেছি। আজ সব নথি সঙ্গে করেই এনেছি। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ নাম না করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘বিনা পয়সায় জমি পেয়ে আবার খবরদারি করছে!’’
অমর্ত্যের হাতে কিছু সরকারি নথিও তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক বিধান রায়কে তাঁর নির্দেশ, ‘‘ওই কাগজপত্রগুলো অথেন্টিকেট করে দিয়ো।’’ জেলাশাসকও বলেন, ‘‘একেবারে রাউন্ড সিল দিয়ে অথেন্টিকেট করে দেব!’’ অমর্ত্যকে ব্যক্তি আক্রমণ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাতে গোটা বাংলাই আহত হয়েছে। আমার ভীষণ গায়ে লেগেছে।’’ অধ্যাপককে এ সব নিয়ে মাথা না ঘামানোরও পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি মানসিক ভাবে একদম কষ্ট পাবেন না।’’
বিশ্বভারতীর জমি বিবাদের মধ্যেই শনিবার একটি সরকারি নথি (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে। প্রকাশ্যে আসা সরকারি নথির প্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্যে সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ়ে রয়েছে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক সূত্রেরও দাবি ছিল, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই।
তার প্রেক্ষিতেই রবিবার বিশ্বভারতী দাবি করেছে, ১৯৪৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আশুতোষকে ১.২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিল বিশ্বভারতী। ১.৩৮ একর নয়। এই বিষয়টি আগের দুই চিঠিতেই অমর্ত্যকে জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ১৯৪৩ সালের সেই চুক্তি এবং ২০০৬ সালের কর্মসমিতির প্রস্তাব, কোথাও আশুতোষ বা অমর্ত্যকে বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিক হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি। প্রেস বিবৃতিতেও কর্তৃপক্ষের দাবি, অমর্ত্যের ‘প্রতীচী’ বাড়ির প্রকৃত জমি ১.২৫ একর। ১৩ শতক জমি অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছেন অর্থনীতিবিদ!
এই জমি বিতর্কে রাজনীতির রংও লেগেছে। বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রাখার অভিযোগ তুলে অমর্ত্যকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে গেরুয়া শিবির। অন্য দিকে, অমর্ত্যের পাশে দাঁড়িয়ে আসরে নেমেছে শাসকদল তৃণমূলও। শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘‘অমর্ত্যবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন বলেই বিজেপির গায়ে এত জ্বালা!’’ তার মধ্যেই অমর্ত্যের বাড়়িতে চলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।