নাজেহাল: বাস কম। তাই বন্ধ দরজা খুলতে মরিয়া অফিস-ফেরত যাত্রীরা। মঙ্গলবার ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ
রাজ্যে বেসরকারি বাস পরিষেবা স্বাভাবিক করতে মালিক সংগঠনগুলিকে এ বার কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে তিনি জানান, ২৬ জুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ, বুধবার থেকে পর্যাপ্ত (৬ হাজার) বেসরকারি বাস ও মিনিবাস যদি রাস্তায় না-নামে তা হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করে বেসরকারি বাসগুলিকে অধিগ্রহণ করা হবে। লকডাউন না-ওঠা পর্যন্ত পরিবহণ দফতর ও সরকারই সেই বাস চালাবে।
আনলক পর্বে বাস চালানোর শুরু থেকেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তুলেছিল মালিক সংগঠনগুলি। কিন্তু রাজ্য তাতে সায় দেয়নি। গত ২৬ জুন নবান্নে অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট ও মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৬ হাজার বেসরকারি বাসকে টানা তিন মাস ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা হয়। কিন্তু কোনও বাসমালিক সংগঠনই তাতে সহমত হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘বারবার আলোচনা করেছি। নরম মনোভাব নিয়ে ডেকে কথা বলেছি, অনুরোধও করেছি। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কিন্তু মানুষের স্বার্থে কখনও কঠোর হতেই হয়। কাল (১ জুলাই) দেখব, তার পরে ৩ জুলাই থেকে বেসরকারি বাস তুলে নেবে সরকার।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বৈঠকে বাসমালিক সংগঠনগুলি সরকারের প্রস্তাব মেনে নিলেও এখন অন্য বিবৃতি দিচ্ছে। মমতা বলেন, ‘‘আশা করব, তাঁরা কথা রাখবেন। তা না-হলে, কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকার দায়ী থাকবে না। দায় বর্তাবে যাঁরা এসে বৈঠক করে গিয়েছেন, তাঁদের উপর।’’
যাত্রী-স্বার্থে সরকারকে কখনও কখনও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক-দু’দিন সময় দিলাম। তার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হলে, সব বাস তুলে নেওয়া হবে। সরকারই চালক দিয়ে গাড়ি চালাবে। মাইনে দেবে। যে ভাবে নির্বাচনের সময়ে তুলে নেওয়া হয়।
—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সে দিনের বৈঠকে উপস্থিত বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২৭ মে থেকে আমাদের বাস রাস্তায় চলছে। যে যেমন পারছেন চালাচ্ছেন। তবে সরকারি অনুদানের ঘোষণার পর থেকে কিছু জায়গায় বিভ্রান্তিকর প্রচার করে বলা হয়েছে, বেসরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ। তাতেই বাসের সংখ্যা কমেছে। তবে পরিস্থিতি শীঘ্রই ঠিক হবে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’’ তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য সরকার বেসরকারি বাস নিয়েছে। তেমন মানুষের স্বার্থে বাস অধিগ্রহণ করে চালানো হলে কোনও আপত্তি নেই। সরকারি অনুদানে নারাজ হলেও বাস অধিগ্রহণে সহযোগিতা করতে রাজি ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত থাকা সংগঠনগুলি এবং তাদের যে পরিবহণ কর্তারা বাছাই করেছিলেন, পুরো দায় তাঁদেরই নিতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ১২ ঘরের ফ্ল্যাটে উঠে গেলেন দিলীপ ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারই চালক দিয়ে বেসরকারি বাসগুলি চালাবে। পুরো খরচ সরকারই বহন করবে। এবং সেটা ভাড়ার সঙ্গে ‘অ্যাডজাস্ট’ হয়ে যাবে। তবে কোনও বেসরকারি বাসের চালক বা কর্মী কাজ করতে চাইলে সরকার তাঁদের এই পর্বে বেতনও দেবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিজেলের দাম বেড়ে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ক্রমাগত ভাড়া বৃদ্ধিকে সমর্থন করি না। তা হলে জ্বালানির দাম বাড়লে যেমন ভাড়া বাড়বে, কমলে ভাড়াও কমবে। ডিজেলের দাম কমার পরে দেখব, মালিক সংগঠনের ভূমিকা কী আছে, তখন ভাবব।’’ এর প্রেক্ষিতে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘২০১২ থেকে রেগুলেটরি কমিটি গঠনের আবেদন জানাচ্ছি। তিন বার গঠন হয়েও তা ভেঙে গিয়েছে। ওই কমিটি থাকলে ডিজেল ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যের দামের উপরে ভিত্তি করে বাসের ভাড়াও স্থির করা যেত।’’
আরও পড়ুন: করোনিলে রোগ সারবে বলিনি, দাবি পতঞ্জলির
এ দিন বাসের জন্য সোমবারের থেকেও বেশি ভোগান্তি হয় শহরে। বারাসত থেকে ধর্মতলা, সাঁতরাগাছি, হাওড়া, গড়িয়া-সহ বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাস চলেনি। উত্তর শহরতলির ২৩০, ২০১-সহ কয়েকটি রুটের কিছু বাস রাস্তায় নেমেছিল। আবার বেহালা রুটে চললেও শহর ও শহরতলিতে সে ভাবে মিনিবাসের দেখা মেলেনি। দমদম নাগেরবাজার থেকে যে ১৫টি রুটে বাস চলে, তা-ও এ দিন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি হয়েছে যাত্রীদের। আবার বারাসতে পরিষেবা বন্ধ রেখে স্ট্যান্ডে বাস রেখে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। একই রকম ভোগান্তির ছবি দেখা গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতাতেও। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘অনুরোধ করব, মানুষের স্বার্থে ইগোর লড়াই বন্ধ করুন। এটা দর কষাকষির সময় নয়।’’